কুলাউড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী। শুক্রবার দুপুরে কুলাউড়া পৌর শহরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে
কুলাউড়ায় সংবাদ সম্মেলন করে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী। শুক্রবার দুপুরে কুলাউড়া পৌর শহরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে

২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত, ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ: সংসদ সদস্য শফিউল

মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরপারে এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। হাওরের পানি খুবই ধীরগতিতে নামছে। রোদে পানি কিছুটা কমলেও বৃষ্টিতে আবার বেড়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্যায় কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী ওরফে নাদেল এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বন্যার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তুলে ধরেন। দুপুর ১২টার দিকে কুলাউড়া পৌর শহরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে ১৭ জুন কুলাউড়ার ভূকশিমইল, কাদিপুর, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, বরমচাল, ভাটেরা, কুলাউড়া সদর ও রাউৎগাঁও ইউনিয়ন এবং কুলাউড়া পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। এতে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যালয় ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তলিয়ে যায়। বন্যার পর কিছু এলাকায় পানি নেমে গেলেও হাকালুকি হাওরপারের ভূকশিমইল, জয়চণ্ডী, কাদিপুর, বরমচাল, ভাটেরা ইউনিয়ন ও কুলাউড়া পৌরসভার অনেক এলাকায় পানি নামছে ধীরগতিতে। সেখানে দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় মানুষ চরম দুর্ভোগে আছেন।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরে সংসদ সদস্য বলেন, বন্যায় এখন পর্যন্ত কুলাউড়ায় ৫০ কিলোমিটার পাকা ও ১৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। ৫ হাজার কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯৪টি পুকুর ও খামারের প্রায় এক কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। তিনি বলেন, বন্যার্তদের সরকারের পক্ষ থেকে চাল, শুকনা খাবার, রান্না করা খাবার, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় শিশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশু নিয়ে উঠেছেন। সেখানে গোখাদ্য দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ দল গঠন করে বন্যার্ত মানুষদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য শফিউল আলম বলেন, হাকালুকি হাওরে পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। হাওরের বিলসহ এর সঙ্গে যুক্ত নদ-নদী, পাহাড়ি ছড়া, খাল পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। হাকালুকি হাওরের পানি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে পড়ে। ফেঞ্চুগঞ্জে জুড়ী নদীর মোহনায় বুড়িকিয়ারি বাঁধের কারণে হাওরের পানি নিষ্কাশনে ব্যাহত হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে। হাওর এলাকায় পাকার বদলে আরসিসি ঢালাই রাস্তা করতে হবে। এতে পানিতে রাস্তার ক্ষতি কম হবে। তিনি বলেন, বন্যার সমস্যা সমাধানে হাওরপারের সব সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার, সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসকসহ সবাই আলোচনায় বসে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান, কুলাউড়ায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জুড়ীর ইউএনও লুসিকান্ত হাজং, কুলাউড়া থানার ওসি মো. আলী মাহমুদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা উপস্থিত ছিলেন।