পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে আজ আরও ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বজনদের দাবি, এখনো ৪০ জন নিখোঁজ আছেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের রংপুর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের তিনটি ডুবুরি দল উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার মারেয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে খোলা তথ্যকেন্দ্র থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায়।
এর আগে গতকাল রোববার রাত ১১টা পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন। এরপর গভীর রাতে একজন এবং আজ ভোর থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ১৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এসব লাশের মধ্যে গভীর রাতে ব্রজেন্দ্র নাথের (৫৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ ভোর থেকে উদ্ধার করা লাশগুলো হলো কবিতা রানী (৫০), সুচিত্রা রানী (২২), দীপ বাবু (১০), ঝর্ণা বালা (৫০), বেজ্যেবালা (৫০) ও দীপশিখা রানী (১০), জগদীশ চন্দ্র (৬০), সুব্রত (২), যতি মিত্র রায় (১৫), গেন্দা রানী (৫০), কনিকা রানী (৪০), সুমিত্রা রানী (৪৫), আদরী রানী (৫০) পুষ্পা রানী (৫০), প্রতিমা রানী (৫০) এবং সূর্যি নাথ বর্মণ (১২) নামের এক শিশু। এসব লাশ মারেয়া আউলিয়ার ঘাট, দেবীগঞ্জ করতোয়া সেতু ও দিনাজপুরের খানসামা সেতু এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রোববার বেলা দেড়টার দিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির এ ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২২ জন নারী, ১২ শিশু ও ৭ জন পুরুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর আটজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের লাশ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে শতাধিক মানুষ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় করে বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন। ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুলতে শুরু করে। এ সময় মাঝি নৌকাটি ঘাটে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে নৌকা ডুবে যায়। নৌকার যাত্রীদের অনেকেই সাঁতরে তীরে ওঠেন। তাঁদের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজে যোগ দেন এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
এদিকে সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও দাফন প্রক্রিয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।