ছেলের ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন মা নাসিমা আক্তার। বুধবার নান্দাইল উপজেলার চামারুল্লাহ গ্রামে
ছেলের ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন মা নাসিমা আক্তার। বুধবার নান্দাইল উপজেলার চামারুল্লাহ গ্রামে

‘পুতের হত্যার বিচার কার কাছে চাইয়াম’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে কিশোর ছেলে মারা গেছে। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে মায়ের আহাজারি থামছেই না। প্রতিবেশীরা চেষ্টা করেও তাঁকে শান্ত করতে পারছেন না। বাড়িতে কেউ গেলেই বলছেন, ‘আমার পুতে রাজনীতি করত না। পেটের দায়ে অল্প বয়সে কাজে লাগানো হয়েছিল। আমারে কওহাইন, কী অপরাধে আমার পুতেরে গুলি কইরা মারা অইল। এর বিচার কার কাছে চাইয়াম।’

ছেলেটির নাম জুবাইদ হোসেন (১৫)। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের চামারুল্লাহ গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি মুদিদোকানে চাকরি করত। ২০ জুলাই সংঘর্ষ শুরুর পর মালিকের নির্দেশে দোকান বন্ধ করে যাত্রাবাড়ী পদচারী-সেতুর নিচ দিয়ে মালিকের বাড়িতে যাচ্ছিল। পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পথচারীরা তার লাশ কাছাকাছি একটি মাদ্রাসার বারান্দায় রেখে দেন। স্বজনেরা খবর পেয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে ২২ জুলাই দাফন করেন।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জুবাইদদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের পুরোনো একটি ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন মা নাসিমা আক্তার। তিনি বলেন, ছেলে ১৫ বৈশাখ বাড়িতে এসেছিল। তাকে পিঠা ও বিরিয়ানি রান্না করে খাইয়েছেন। ছেলে যে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরবে, কখনো ভাবতে পারেননি।

জুবাইদের বাবা আবদুল আজিজ বলেন, তাঁর ৯ ছেলের মধ্যে জুবাইদ অষ্টম। হৃষ্টপুষ্ট ছিল। বয়স ১৫ হলেও দেখাত পূর্ণবয়স্ক মানুষের মতো। বাড়ির কাছের মাদ্রাসায় পড়ত। পড়ালেখায় মনোযোগী না হওয়ায় কাজে লাগিয়ে দেন। তিনি বলেন, তিনি কিংবা ছেলে কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তারপরও তাঁর ছেলেকে মরতে হয়েছে। লাশের গোসল দেওয়ার সময় ছেলের বুকে গুলির চিহ্ন দেখেছেন।

ছেলের হত্যার বিচার প্রসঙ্গে আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমরা মূর্খ মানুষ, কার কাছে বিচার চাইয়াম। বিচার চাইয়া কি বিপদে পড়তাম।’ ছেলে নিহত হওয়ার পর কেউ খোঁজ নিয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কেডা আমরার খুঁজ (খোঁজ) নিব।’