মধু সংগ্রহের কারণে শর্ষের ফলনও বাড়ে। শর্ষের ফলন ভালো হওয়ায় মধু সংগ্রহ বাড়বে বলে আশা চাষিদের।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ছবিলাপুর গ্রামে শর্ষেখেতের পাশে মৌ চাষের ৭৫টি বাক্স বসিয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম। এ থেকে তিনি অন্তত ২০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান, শর্ষেখেত থেকে মধু আহরণ করলে পরাগায়ণ হয়। এতে শর্ষের উৎপাদন বাড়ে। তাই খেতের মালিকেরাও মৌচাষিদের উৎসাহিত করছেন।
শুধু সাইফুল ইসলাম নন, জামালপুরের পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শর্ষেখেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ চলছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকায় বাক্স বসছে। পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হলুদের সমারোহ। গ্রামের মাঠজুড়ে আবাদ হয়েছে শর্ষে। ইতিমধ্যে শর্ষে থেকে মৌমাছির সাহায্যে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মধু সংগ্রহের কারণে শর্ষের ফলনও বাড়ে। শর্ষের ফলন ভালো হওয়ায় মধু সংগ্রহ বাড়বে বলে আশা চাষিদের।
জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা জানান, মৌমাছি শর্ষেখেতের ফুলে ঘুরে ঘুরে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে শর্ষে ফুলে সহজে পরাগায়ণ ঘটে। তাই শর্ষেখেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে শর্ষের ফলন অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি মৌচাষিরা মধু আহরণ করে লাভবান হন। শর্ষেচাষিরা মধু সংগ্রহকারীদের বাধা না দিয়ে আরও সহযোগিতা করে। নানাভাবে মধু সংগ্রহকারীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
মৌচাষি মো. সাইফুল ইসলাম মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রবিপুর সরকারপাড়া এলাকা থেকে। তিনি বলেন, ‘৭৫টি বাক্স থেকে ১৮ থেকে ২০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারব। এক মাস এখানে থাকব। প্রায় ৩ লাখ টাকার মধু বিক্রি করতে পারব। পাইকারি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে মধু এবার বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে। মধু সরাসরি কয়েকটি কোম্পানিতে দিয়ে থাকি। সব খরচ বাদ দিয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ করার আশা করছি।’
মেলান্দহের চর বংশীবেল তৈল গ্রামে শর্ষেখেতের পাশে ১০০টি মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করেছেন চাঁন মিয়া। সপ্তাহে এ বাক্স থেকে সাত মণ মধু সংগ্রহ করতে পারছেন। তিনি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলা থেকে এসেছেন। একই জেলার মধুপুর এলাকার ফিরোজ মিয়া গত ডিসেম্বর মাসে মৌ চাষের ২০০ বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি ১৫ মণ মধু সংগ্রহ করেছেন। জামালপুর-ইসলামপুর মহাসড়কের পাশে মেলান্দহের কম্পপুর এলাকায় ১০০টি করে বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন রিপন মিয়া। তিনি জানান, মৌমাছির বাক্স বসালে ফলন ভালো হয়। তাই খেতের মালিকেরা বাক্স বসাতে তাঁদের সহায়তা করেন।
কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় ২৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে শর্ষে চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শর্ষে চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর। গত মৌসুমের চেয়ে এবার ৯ হাজার ৬০ হেক্টর বেশি শর্ষে চাষ হয়েছে। এই মৌসুমে ৩৪ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন শর্ষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উচ্চফলন ও স্থানীয় উভয় জাতের শর্ষে কৃষকেরা চাষ করেন। দুই জাতের শর্ষেই নভেম্বরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাতভেদে ৭০-৯০ দিন। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শর্ষে ফুলের সমারোহ। কৃষকেরা যেমন মাঠে শর্ষে পরিচর্যা করছেন, তেমনি খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।
জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় শর্ষের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌচাষীরা মধু সংগ্রহের জন্য বাক্স নিয়ে এসেছেন। শর্ষেক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহের বাক্স শোভা পাচ্ছে।
মাদারগঞ্জ উপজেলার মৌচাষি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মৌ চাষে খরচ অনেক। বছরে ৭ মাস মধু হয় না। এ সময় মৌমাছিকে বাঁচিয়ে রাখতে চিনি খাওয়াতে হয়। এ বছরের চিনির দামও বেশি। এ বছরের মধু সংগ্রহে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক আগে থেকে মৌ চাষ করসছি। সরকার যদি সরাসরি মধু সংগ্রহের ব্যবস্থা করত। তাহলে আমরা সঠিক দামটা পেতাম। এতে আমাদের লাভ হতো বেশি।’
মেলান্দহের ঘোষেরপাড়া এলাকার মৌচাষি রেজাউল করিম বলেন, মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সরকারিভাবে নেওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।