ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন হঠাৎ করে বুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই আজ শনিবার সকাল থেকে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকার আশপাশের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে চীন মৈত্রী বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু, দ্বিতীয় সেতু ও তৃতীয় সেতুতে (বছিলা সেতু) যান চলাচল করছে না। এতে রাজধানীগামী সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে সেতু পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
নৌকার মাঝি ও তাঁদের সমবায় সমিতির নেতাদের দাবি, নৌ পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নির্দেশে তাঁরা আজ শনিবার সারাদিন নৌকা চালানো বন্ধ রেখেছেন। তবে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আজ শনিবার সকাল ৮টা থেকে কেরানীগঞ্জের বরিশুর, খোলামোড়া, মান্দাইল মসজিদ ঘাট, জিনজিরা ফেরিঘাট, আগানগর ব্রিজ ঘাট ও পূর্ব আগানগর গুদারঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খেয়া নৌকার মাঝিরা নৌকা বেঁধে রেখে নদীর ঘাটে বসে আছেন। সেখানে রাজধানীগামী কর্মজীবী অনেক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ মানুষই ঘাটে এসে জানতে পেরেছেন নৌকা চলাচল করছে না। এদিকে তিনটি সেতুর প্রবেশপথে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর, কদমতলী, ও হাসনাবাদ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীতে ঢোকার সময় মানুষকে পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়ে হচ্ছে।
পাঁচজন খেয়ার নৌকার মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌ পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাঁদের খেয়া নৌকা বন্ধ রাখার ব্যাপারে গতকাল রাতে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। আগানগর ব্রিজঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি সোবহান মিয়া বলেন, ‘গতকাল রাতে নৌ পুলিশ এসে বলেছে, আজ শনিবার সকাল থেকে নৌকা চালানো বন্ধ রাখতে হবে। তাই আমরা নৌকা চলাচল বন্ধ রেখেছি।’
জিনজিরা ফেরিঘাট এলাকার মাঝি ইমরান হোসেন বলেন, সকাল ছয়টার দিকে তিনি ঘাটে এসেছেন। এ সময় এক যাত্রীকে সোয়ারীঘাটে পৌঁছে দিতে গেলে নৌ পুলিশের ট্রলারে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে বকাঝকা করেন। এরপর থেকেই তিনি নৌকা বেঁধে রেখে ঘাটে বসে আছেন।
হঠাৎ করে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। কেরানীগঞ্জের জিনজিরা ফেরিঘাট এলাকায় এক নবজাতক ও এক শিশুকে নিয়ে বসেছিলেন তিন নারী। তাঁরা রাজধানীর চকবাজারের আমানবাগ এলাকায় যাওয়ার জন্যে ঘাটে বসে নৌকার জন্য অপেক্ষা করছেন। গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম (৫৫) বলেন, ‘তিন দিন আগে কেরানীগঞ্জের আল বারাকা হাসপাতালে আমার মেয়ের বাচ্চা হয়েছে। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এখন বাড়ি যাব। কিন্তু ঘাটে এসে দেখি নৌকা নাই। দুই–একটা নৌকা ছিল, সেটাও পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাড়ায় দিছে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কিন্তু কোনো নৌকা পাচ্ছি না। ভাবছি, বুড়িগঙ্গা সেতু দিয়ে হেঁটে বাড়ি যাব।’
নৌকা বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্ব আগানগর খেয়ার মাঝি সমবায় সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত দুই দিন আগে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আমাদের বলেছে, আজ সারাদিন নৌকা চালানো বন্ধ রাখতে হবে। এ কারণে নৌকার মাঝিরা নৌকা চালানো বন্ধ রেখেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পুলিশ বরিশুর ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক আবদুস সালাম বলেন, নৌ পুলিশ নৌকা চলাচল বন্ধ করেনি। তবে বুড়িগঙ্গা নদীতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য টহল দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ও সাভারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশ রয়েছে। বৃহৎ দুটি দলের সমাবেশের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন নাশকতাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটাতে পারে, সে জন্য সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে খেয়া চলাচল বন্ধের বিষয়ে কোনো মেসেজ পাইনি। এই ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছেনা। সবাই চলাচল করতে পারছে।’
এদিকে সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় ‘এসো বিজয় উল্লাসে মাতি’ ব্যানারে একটি শামিয়ানার নিচে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মাহমুদ আলমকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁর সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীরাও বসে ছিলেন। দুই দিন ধরে ওই স্থানে যুবলীগের নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। জানতে চাইলে মাহমুদ আলম বলেন, ‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি। রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতের দোসররা যেন এলাকায় কোনো ধরনের অঘটন ও আগুন সন্ত্রাস করতে না পারে, সে জন্য আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।’
সদরঘাটে পুলিশি তৎপরতা
বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ সকাল থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া নৌ পুলিশের একাধিক দলকে বুড়িগঙ্গা নদীতে টহল দিতে দেখা গেছে। আজ শনিবার ভোর পাঁচটায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে সাতটি যাত্রীবাহী লঞ্চ এসেছে। তবে লঞ্চে তেমন যাত্রী ছিল না।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. শহিদউল্যাহ বলেন, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত সাতটি লঞ্চ এসেছে। সদরঘাট এলাকায় যেন কোনোরকমের বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।