ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে প্রবেশের সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে নানা আলোচনা

কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে ফেরার নতুন সময়সীমা নিয়ে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রসংগঠন। কোনো কোনো সংগঠন বলছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করে সময় নির্ধারণ করা ঠিক হয়নি।

গত শনিবার অনুষ্ঠিত ১৪০তম প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ছাত্রদের হলগুলোতে রাত ১১টার মধ্যে ছাত্রদের প্রবেশ বাধ্যতামূলক। ছাত্রীদের হলে মাগরিবের আজান হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রবেশ বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ হল ছাড়া অন্য হলে অবস্থান নিষিদ্ধ। এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি হলগুলোতে নোটিশ আকারে টাঙানো হয়। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক শেখ এ বি এম জাকির হোসেন সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত সাময়িক, এটা উইথড্র (প্রত্যাহার) করা হবে। আজ (সোমবার) থেকে ক্যাম্পাস ছুটি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য এই সাময়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছুটি শেষে জানুয়ারিতে আগের নিয়মে চলবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র বলছে, সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি শুরু হয়েছে। আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি থাকবে। ৪ জানুয়ারি থেকে যথারীতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

ছাত্র ও ছাত্রীদের আবাসিক হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ক্যাম্পাসে ছেলেদের জন্য পাঁচটি ও মেয়েদের জন্য তিনটি হল রয়েছে। তাতে আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী আবাসিক থাকতে পারেন। ছেলেদের হলে প্রবেশের নির্ধারিত তেমন কোনো সময় নেই বলে ছাত্ররা জানিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, মাঝে কোনো এক সময় রাত ১১টা পর্যন্ত প্রবেশের সময় ছিল। তবে সেটি কেউ মানতেন না।

এদিকে ছাত্রীরা বলছেন, মেয়েদের হলে সান্ধ্য আইন (মাগরিবের আজানের ১৫ মিনিটের মধ্যে) ছিল। তবে তারপরও অনেকে সন্ধ্যা ছয়টা বা সাতটা পর্যন্তও হলে প্রবেশ করতে পারতেন। কিন্তু এবার ছেলেদের সময় বেঁধে দেওয়ার পর সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিবৃতি দিয়েছেন কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কোনো ধরনের শৃঙ্খলা বা নীতির নামে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা হরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা, মতপ্রকাশ এবং নিজেদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করতে পারে, সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করা উচিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদ্য ঘোষিত সান্ধ্য আইন শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে এবং একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আমরা মনে করি, সান্ধ্য আইন শিক্ষার্থীদের মৌলিক স্বাধীনতা ও তাদের জীবনযাত্রাকে সীমাবদ্ধ করার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।’

আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলছেন, এই নির্দেশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা ও জীবনযাত্রা সীমাবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা, যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান তিনি।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষার্থী রোকসানা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি মানসিক চাপ। কেননা অনেকে ক্যাম্পাস থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে টিউশনি করতে যায়। ক্যাম্পাসে সর্বশেষ গাড়ি আসে রাত সোয়া আটটায়। এ ছাড়া অনেকে ল্যাব শেষ করে বাইরে বাজার করতে যায়। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করলে খুবই ভালো হয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক মুখলেচুর রাহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিকতা নেই। অবশ্যই সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। বিষয়টি প্রভোস্ট কাউন্সিলকে জানানো হয়েছে। তা ছাড়া আবাসিক হলগুলো ক্যানটিন, চাহিদা মোতাবেক মেডিসিন (ওষুধ), পর্যাপ্ত রিডিংরুম (পাঠকক্ষ) নিশ্চিত করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। জরুরি অবস্থায় প্রবেশ-প্রস্থানের রোডম্যাপ না দিয়ে মেয়েদের হলে সান্ধ্য আইন এবং ছেলেদের হল ১১টায় বন্ধ—এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করি।’