অসুস্থ অবস্থায় ইগলটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। পরে সেবাশুশ্রূষায় সেটি সুস্থ হয়। আনুষ্ঠানিক অবমুক্তির আগেই সেটি উড়াল দেয়। তবে দেড় মাস পর আবারও পাখিটি ফিরে এসেছে।
এ ঘটনা রাজবাড়ী সদর উপজেলার। বর্তমানে ইগলটি রাজবাড়ী শহরের সজ্জনকান্দা টিএনটিপাড়ায় ‘আরামঘর জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র’–এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
প্রায় ১০ বছর আগে স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরামঘর’ প্রতিষ্ঠা করেন সাংবাদিক লিটন চক্রবর্তী। এর সাতটি সহযোগী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম আরামঘর জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র। পাঁচ সদস্যের জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবু আবদুল্লাহ স্বপন। আর এর উপদেষ্টা হলেন সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খায়ের উদ্দিন আহম্মেদ।
আরামঘর জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ৪ জুলাই রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুরের একটি মাঠে একটি ইগল হাজির হয়। তখন স্থানীয় কয়েক কিশোর ঢিল ছুড়ে এটিকে জখম করে। পাখিটির ডান পাশের ডানার অংশবিশেষ ভেঙে যায় এবং পা ও মুখে আঘাত পায়। আহত পাখিটিকে দেখে স্থানীয় একজন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা ইগলটি উদ্ধার করে সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে যান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খায়ের উদ্দিন আহম্মেদ প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পাখিটিকে আরও কিছুদিন সেবাযত্ন করার প্রয়োজন ছিল। তাঁর পরামর্শে বন বিভাগ ইগলটিকে আরামঘর জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রে হস্তান্তর করে।
লিটন চক্রবর্তী জানান, সজ্জনকান্দা টিএনটিপাড়ায় আরামঘর জীববৈচিত্র্য রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্রে ইগলটিকে রাখা হয়েছিল। প্রায় দেড় মাস ইগলটি তাঁদের কাছে ছিল। তখন প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টাকার মতো খরচ হতো। সংগঠনের সদস্যরা টাকা দিতেন। প্রতিদিন পাখিটিকে সকালে প্রায় ৫০০ গ্রাম কাঁচা মাছ, দুপুরেও ৫০০ গ্রামের মতো বাটা, রুই–জাতীয় মাছ এবং রাতের বেলায় হাড় ছাড়া মুরগির কাঁচা মাংস খেতে দেওয়া হয়। ইগলটি সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। অবমুক্ত করার আগেই হঠাৎ করে সেটি উড়ে চলে যায়। আমরা ভেবেছিলাম, প্রাকৃতিক পরিবেশে ইগলটি আপন ঠিকানায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
ইগলটি আরামঘরে অনেক দিন ছিল। মায়ার টানে পাখিটি আবার এখানে এসেছে। এর প্রতিও আমাদের মায়া বেড়ে যাচ্ছে। আমরা চাই ইগলটি প্রাকৃতিক পরিবেশে মিশে থাকুক।লিটন চক্রবর্তী, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরামঘর’ এর প্রতিষ্ঠাতা
প্রায় দুই মাস পর ইগলটি সজ্জনকান্দা টিএনটিপাড়ায় ফিরে এসেছে। লিটন চক্রবর্তী জানান, গত রোববার দুপুরে প্রতিবেশী সূর্য মিয়ার ঘরের চালায় ইগলটিকে দেখা যায়। সূর্য মিয়ার মেয়ে নীলা ইগলটির সামনে পানির পাত্র দিতে যায়। তখন ইগলটি মেয়েটিকে ঠোকর দেয়। আহত নীলাকে সদর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ইগলটি উদ্ধার করে আরামঘরে আনা হয়েছে।
লিটন চক্রবর্তী বলেন, ‘ইগলটি আরামঘরে অনেক দিন ছিল। মায়ার টানে পাখিটি আবার এখানে এসেছে। এর প্রতিও আমাদের মায়া বেড়ে যাচ্ছে। আমরা চাই ইগলটি প্রাকৃতিক পরিবেশে মিশে থাকুক। মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াক। পাখিটি তার সঙ্গী বেছে নিক।’
রাজবাড়ী সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, দেশি প্রজাতির ইগলটির বয়স প্রায় এক বছর। সুস্থ হয়ে ইগলটি চলে গিয়েছিল। প্রায় দুই মাস পর এটি ফিরে এসেছে। পাখিটির শরীর কিছুটা দুর্বল। সুস্থ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ইগলটিকে অবমুক্ত করা হবে।