রংপুরের বদরগঞ্জে কলের লাঙলের (পাওয়ার টিলার) চাকায় পিষ্ট হয়ে ১৩ মাসের একটি শিশু মারা গেছে। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ঘৃনই সোনাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটির নাম সোহানা বেগম। সে ওই গ্রামের কৃষক ছাবেদ আলীর মেয়ে।
বদরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিউল্লাহ আব্বাস ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, এলাকার লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী কলের লাঙলের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিশুটি মারা গেছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এলাকার লোকজন ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আমন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন ছাবেদ আলী। আজ বেলা তিনটার দিকে সেই জমি কলের লাঙল দিয়ে চাষ করার কথা ছিল। এ জন্য তাঁর স্ত্রী সোহাগী বেগম দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ওই জমিতে গিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া ধানের গোড়া (মুড়া) কাটতে থাকেন। একপর্যায়ে ১৩ মাস বয়সী সন্তান সোহানা ঘুমিয়ে পড়লে সোহাগী বেগম ওই জমিতে জড়ো করে রাখা মুড়ার ওপরে শিশুটিকে শুইয়ে রাখেন। এরপর তিনি আরেক সন্তান চার বছর বয়সী আবদুল্লাহকে নিয়ে জমির আরেক প্রান্তে ধানগাছের মুড়া কাটতে থাকেন।
শিশুটি ঘটনাস্থলে মারা গেলেও কলের লাঙলের চালক কিংবা মা কেউই বিষয়টি তাৎক্ষণিক টের পাননি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর মা সোহাগী বেগম শিশুর কাছে গিয়ে দেখেন, নাক, মুখ ও মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
এরই মধ্যে কলের লাঙল নিয়ে চালক শাহীন শাহ ওই জমিতে গিয়ে দেখেন, ধানগাছের মুড়া কাটছেন সোহাগী। তখন তিনি মুড়া তোলা শেষ করার কথা বলে জমি চাষ না করে লাঙল নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তবে তিনি যাওয়ার সময় জমিতে জমা করে রাখা ধানগাছের মুড়ার ওপর দিয়ে কলের লাঙলের চাকা ঘুমন্ত শিশুটির ওপর দিয়ে যায়। এতে শিশুটি ঘটনাস্থলে মারা গেলেও চালক কিংবা মা কেউই বিষয়টি তাৎক্ষণিক টের পাননি। প্রায় আধা ঘণ্টা পর মা সোহাগী বেগম শিশুর কাছে গিয়ে দেখেন, নাক, মুখ ও মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। এ সময় তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে শিশুটিকে মৃত দেখতে পান।
তবে চালক শাহীন শাহ বলেন, তিনি কলের লাঙল নিয়ে ওই জমি চাষ করতে গিয়ে ফিরে এলেও শিশুটিকে সেখানে দেখতে পাননি।
ঘটনার পর থেকে মা সোহাগী বেগম আহাজারি করে বলে চলেছেন, ‘কেন বুকের ধনকে নিয়ে জমিতে গেলাম। কেন খোঁজ নিলাম না। আমিও আর বাঁচতে চাই না। আল্লাহ আমার জীবনটাও নিয়ে যাও।’