পাঁচ বছর আগে গভীর রাতে সেলিম হায়দারের বুকে ব্যথা শুরু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা একটি রিকশাও পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক চেষ্টার পর একটি অটোরিকশা মেলে। ততক্ষণে অনেক সময় পেরিয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর ভর্তি করা হয় সেলিম হায়দারকে। দুই দিন পর তিনি মারা যান।
এই ঘটনা দাগ কাটে সেলিম হায়দারের ছেলে রকি হায়দারের মনে। ভাবেন, সময় মতো হাসপাতালে নিতে পারলে হয়তো রক্ষা পেতো তাঁর বাবার জীবন। সেই দিন তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন, রাতবিরাতে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বিনা মূল্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করবেন। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন টাঙ্গাইল শহরের বাসিন্দা রকি হায়দার। দুই মাস আগে তিনি চালু করেছেন অ্যাম্বুলেন্স সেবা।
রকি হায়দার ২০২১ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাই তিনি এই অ্যাম্বুলেন্স সেবার নাম দিয়েছেন ‘হ্যালো কাউন্সিলর’। কারও ফোন পেলেই অ্যাম্বুলেন্সটি চলে যায়। বিনা পয়সায় পৌঁছে দেয় হাসপাতালে।
গতকাল শনিবার সরেজমিন টাঙ্গাইল শহরতলীর সন্তোষ রথখোলা এলাকায় রকি হায়দারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সামনেই অ্যাম্বুলেন্সটি রয়েছে। রকি হায়দার জানান, পুরাতন এই অ্যাম্বুলেন্সটি কেনার জন্য তাঁর মা ফিরোজা বেগম ছয় লাখ টাকা দেন। তারপর টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক এবং রকিদের আত্মীয় মো. রিয়াজ উদ্দিন এক লাখ টাকা করে দেন। এই দুই লাখ টাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করেন।
এলাকায় ‘হ্যালো কাউন্সিলরের’ একটি মুঠোফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ফোনটি রকি হায়দারের হাতেই থাকে। ফোন পেলেই তিনি নিজেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে যান রোগীর বাড়িতে। তিনি জানান, সার্বক্ষণিক চালক রাখলে অনেক ব্যয় হবে। তাই নিজেই এটি চালান। তবে টাঙ্গাইলের বাইরে ঢাকা বা অন্য কোথাও রোগী নিয়ে যেতে হলে অস্থায়ী চালক আছেন। তাঁদের দিয়ে পাঠানো হয়।
সন্তোষ বালুচরা এলাকার হালিম মিয়া বলেন, মাসখানেক আগে তিনি প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হন। ফোন করেন কাউন্সিলরের নম্বরে। দ্রুত ছুটে আসে অ্যাম্বুলেন্স। পরে তাঁকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্তোষ রথখোলা এলাকার উজ্জল মিয়া জানান, তাঁর স্ত্রী চম্পা বেগমের প্রসববেদনা উঠলে ফোন করেন কাউন্সিলরের অ্যাম্বুলেন্সকে। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স এসে তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সন্তোষ ঘোষপাড়া এলাকার তাপস কুমার ঘোষ বলেন, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এ এলাকার মানুষের জরুরি রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে আর কোনো চিন্তা করতে হয় না। ফোন করলেই অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। বিনা পয়সায় হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রকি হায়দার বলেন, ‘এই অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছি। তাই খুব ভাল লাগে। দুই মাসে ১৮ জন রোগীকে টাঙ্গাইল, ঢাকা, মির্জাপুর ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে বিনা মূল্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
টাঙ্গাইলের সরকারি এমএম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে বিনা পয়সা যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা একজন কাউন্সিলর চালু করেছেন, তা খুবই প্রশংসনীয়। সমাজের সামর্থবান ব্যক্তিরা এভাবে জনকল্যাণমূলক কাজে এগিয়ে এলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন।