নোয়াখালীর সার্বিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। বর্তমানে জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিন দিন ধরে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে আছে। এতে জেলা শহর মাইজদীসহ আটটি উপজেলার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলায় তৃতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সাগরে লঘুচাপ বিরাজ করছে। এর প্রভাবে আরও কয়েক দিন বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
সকালে জেলা শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাসাবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টির পানি থই থই করছে। রশিদ কলোনি এলাকার বাসিন্দা মনু দাশ গুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় তাঁর বসতঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। সাপ ও পোকামাকড়ের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে তাঁর। এ পরিস্থিতিতে রান্নাবান্না করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে।
সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে তাঁর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়ে আছে। উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে মানুষ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না।
বেগমগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. আরিফুর রহমান জানান, বেগমগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বেশির ভাগ রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ঘরবাড়িতেও পানি। কোনো এলাকায় সড়কের ওপরও কোমরসমান পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এ পর্যন্ত ৮ লাখ টাকা ও ৯৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টিতে এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ক্রমেই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে মুহুরী নদীর পানি। ওই পানি নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর হয়ে মেঘনায় নামা শুরু হলে এখানকার অবস্থা আরও খারাপ হবে। জেলা প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়ে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে।