কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রতিবছরই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা-কর্মীদের মধ্যে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ স্থানীয় যুবজোটের নেতা-কর্মীদের হামলায় এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত হন। এ নিয়ে এলাকায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সংসদ সদস্য ও জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে। তিনি বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছেন। বুধবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
প্রায়ই আওয়ামী লীগ ও জাসদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আপনারা তো জোটবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় আছেন। তাহলে এই মারামারি কেন হয়?
হাসানুল হক ইনু: ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা বিএনপির ধানের শীষে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সেই অংশটা (আওয়ামী লীগের নেতা) এই মারামারির পেছনে ইন্ধন জোগান সব সময়। যেকোনো আঞ্চলিক মারামারি, পারিবারিক শত্রুতা বা গোষ্ঠীগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে জাসদের সঙ্গে বিরোধটা জিইয়ে থাকে। সেই আওয়ামী লীগ নেতারা ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের মারামারিতে উসকানি দেন। তাঁরা এখনো সক্রিয়। বিএনপির সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার মৃত্যুর খবরে ভেড়ামারা শহরে একাধিক বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন?
হাসানুল হক ইনু: যতটুকু জেনেছি অতর্কিত আক্রমণ হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সেটা প্রথম দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুঝতে পারেনি। প্রশাসনের কাজে আমি সন্তুষ্ট। আশা করব, যারা ভাঙচুরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের কারাগারে পাঠাবে। জেনেছি, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে শনাক্ত করা গেছে, যারা বিএনপির রাজনীতি করে।
এসব ঘটনায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জোটের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে?
হাসানুল হক ইনু: ঘটনা ভেড়ামারায়। এতে জোটের ভেতর কেন প্রভাব পড়বে? এসব বিরোধ কোনো রাজনৈতিক বিরোধ নয়। পূর্ববিরোধে এসব ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে যুবজোট নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রশাসনকে বলা হয়েছে সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে।
ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের সব ঘটনার ক্ষেত্রে জাসদ জড়িত বলে অভিযোগ করেন। এবারের ঘটনায়ও তাঁরা এমনটাই দাবি করেছেন। এ বিষয়ে আপনার কী বলার আছে?
হাসানুল হক ইনু: আগ বাড়িয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা যেসব কথা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে, এ ধরনের হামলার উসকানির সঙ্গে তাঁরা জড়িত থাকতে পারেন। নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছেন।
হত্যাকাণ্ড ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলো তো সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে...
হাসানুল হক ইনু: দুটি কাজই খুব অন্যায় কাজ। ব্যক্তিগত মত, যারা দুটি ঘটনায় জড়িত, তাদের একটাকেও ছাড় না দেওয়া। এর পেছনে যদি রাজনৈতিক বড় নেতারাও জড়িত থাকেন, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা উচিত। এটা জোটের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে করা উচিত।
দীর্ঘদিনের এই যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, বিরোধ, দ্বন্দ্ব—এসব নিয়ে জোটের শীর্ষ পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়?
হাসানুল হক ইনু: হ্যাঁ, কথা ওঠে। এসব নিয়ে আলোচনা হয়। এটা নিরসন হওয়া দরকার। যারা এই ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত, গ্রামের কোন্দলকে জাসদ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রূপ দেওয়ার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করে, উভয় পক্ষকে সতর্কভাবে মোকাবিলা করতে হবে।