নাব্যতা–স্বল্পতায় ফেরি ভিড়তে সমস্যা, দৌলতদিয়ায় ঘাটে খননকাজ চলছে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের কাছে নাব্যতা সংকট দূর করতে এক মাস ধরে খনন করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মার পানি কমে নাব্যতা–সংকট দেখা দিয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। ৭ নম্বর ঘাটের কাছে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় এক মাস ধরে বড় ফেরি ভিড়তে পারছে না। নাব্যতা–সংকট দূর করতে খননকাজ চলছে। অধিকাংশ সময় ঘাটের একাধিক পকেট বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, দৌলতদিয়ায় ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল। এর মধ্যে ৭ নম্বর ঘাটের কাছে খননকাজ হচ্ছে। অদূরে আরেকটি খননযন্ত্র আছে। ঘাট থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে বাহির চর দৌলতদিয়ায় ব্যক্তি মালিকানা জমিতে খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ঘাটের সামনে পদ্মা নদীতে বিশাল আকারের বালুর চর জেগেছে। ফেরি ঘাট ও ডুবোচরের মধ্যে নালার মতো সরু চ্যানেল তৈরি হয়েছে। চ্যানেল দিয়ে ফেরি সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করছে। পাশাপাশি দুটি ফেরি চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে।

রোরো (বড়) ফেরি শাহ পরানের দ্বিতীয় মাস্টার মাহমুদুল হাসান বলেন, শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে প্রতিদিন পদ্মার পানি কমতে কমছে। ফলে ফেরি চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে। দৌলতদিয়া ঘাটের কাছে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় চ্যানেল দিয়ে ফেরিগুলো সতর্কতার সঙ্গে চালাতে হচ্ছে। ৭ নম্বর ঘাটের কাছে পানি কমে যাওয়ায় এক মাস ধরে বড় ফেরি ভিড়তে পারছে না। একটি মাত্র পকেট চালু থাকায় ইউটিলিটি (ছোট) ফেরি ভিড়তে পারছে। খনন করে নাব্যতা দূর করা সম্ভব না হলে সামনের দিনগুলোয় ফেরি চলাচলে আরও ঝুঁকি বাড়বে।

ফেরিঘাটের ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা বলেন, বর্ষাকালে ভাঙনের কারণে ঘাট বন্ধ থাকে। কয়েক বছর ধরে তিনটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কুয়াশায় ফেরি বন্ধের পাশাপাশি নাব্যতা–সংকটের কারণে ফেরি বন্ধের উপক্রম হয়। সারা বছরই ভোগান্তি নিয়ে এই রুট দিয়ে যাত্রীদের পারাপার হতে হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয় জানায়, দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে নদীভাঙনে কয়েক বছর ধরে ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট চালু থাকলেও নাব্যতা–সংকটে বছরের অধিকাংশ সময় ৬ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকে।

সূত্রটি আরও জানায়, মোংলা বন্দর থেকে পাকশী পর্যন্ত নৌপথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য মোংলা বন্দর থেকে মাওয়া, গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়নে (১ম সংশোধিত) নেওয়া প্রকল্পের আওতায় খননকাজ শুরু হয়। হিজলা-উলানিয়া হতে মাওয়া পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার এবং দৌলতদিয়া থেকে পাবনার নাজিরগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার নদীপথ খননে ৪২ লাখ ঘন মিটার মাটি অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৪ লাখ ঘন মিটার মাটি অপসারণ করা হয়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জরুরি ভিত্তিতে দৌলতদিয়া এবং ধাওয়াপাড়া ঘাট এলাকায় ২২ অক্টোবর থেকে খনন শুরু হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মিটার মাটি অপসারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনী নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ডিইডব্লিউ) নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজ করছে। আর এ কাজ তদারকি করছে বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের খনন বিভাগ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এবং দুই ফেরিঘাটের মধ্যবর্তী চরসহ দৌলতদিয়া থেকে নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত নাব্যতা–সমস্যা সাপেক্ষে খননকাজ করছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের খনন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাছান আহমেদ বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় নাব্যতা–সংকট কাটাতে দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া নৌপথের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে ১০০ মিটার চওড়া করতে নৌবাহিনীর দুটি খননযন্ত্র দিয়ে কাজ চলছে। এই রুটে ফেরি চলাচলের জন্য সাধারণত ১২ ফুট গভীরতা পানি থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে পানির গভীরতা কম থাকায় খনন করে নাব্যতা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।