নারী খেলোয়াড়দের যারা অপদস্থ করছে, তাদের বিচার হওয়া দরকার

খুলনার বটিয়াঘাটায় বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলের চার নারী খেলোয়াড় হামলার শিকার হয়েছেন। খেলার পথে এগিয়ে যেতে নারীদের বাধা এবং কীভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে খুলনা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে।

সাইফুল ইসলাম
প্রশ্ন

দেখা যাচ্ছে, নারীদের খেলাধুলায় প্রথম বাধাটা আসছে পরিবার থেকে। পরিবার চায় না মেয়েরা খেলাধুলায় আসুক। এই মানসিকতা কেন?

সাইফুল ইসলাম: আমাদের সমাজব্যবস্থাই এ ক্ষেত্রে বড় বাধা। আবার যে মেয়েটি খেলতে আসেন, তাঁকে আমরা অনেক সময় নিজের মেয়ের মতো করে দেখি না। এ কারণেও অনেক সময় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। একধরনের সামাজিক সংকট তৈরি হয়। তার মধ্যেও নারী ফুটবলে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের মাধ্যমে ফুটবলে মেয়েদের আগ্রহ তৈরি করা গেছে।

প্রশ্ন

আবার দেখা যাচ্ছে, যে মেয়েরা খেলতে আসছেন, তাঁদের নানাভাবে অপদস্থ হতে হচ্ছে।

সাইফুল ইসলাম: নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভালো অবস্থানে আছে। তবে আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবর্তন হয়নি। হাফপ্যান্ট পরে খেললে বাজে কথা শুনতে হয়। সে জন্য অনেক অভিভাবক খেলতে দিতে চান না। অথচ দেশকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য খেলাধুলা বড় মাধ্যম। নারী ফুটবলকে এগিয়ে নিতে বাফুফের নানাবিধ পরিকল্পনা আছে। স্থানীয়ভাবে আমরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন নানাভাবে সামর্থ্যের মধ্যে চেষ্টা করি। নারী খেলোয়াড়দের যারা অপদস্থ করছে, তাদের বিচার করা দরকার। তা না হলে তাদের সাহস বেড়ে যাবে।

প্রশ্ন

নিভৃত পল্লি বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলার মেয়েরা যখন এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন কিছু মানুষ এর বিরোধিতা করছেন। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

সাইফুল ইসলাম: এ ধরনের বিরোধিতা সব সময় থাকে। এর মধ্যেও সেখানে স্থানীয়ভাবে একটা ফুটবল একাডেমি হয়েছে। স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সেটায় পৃষ্ঠপোষকতা দেন। আমরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তেঁতুলতলা থেকে খেলোয়াড় নিয়ে জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দল পরিচালনা করি। আরও মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। যারা খেলোয়াড় মেয়েদের হেয়প্রতিপন্ন করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিকভাবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

প্রশ্ন

নারী ফুটবলারদের ওপর হামলাকে কীভাবে দেখছেন?

সাইফুল ইসলাম: বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা জঘন্যতম ঘটনা। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। শুধু বিবৃতি নয়, আমরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেব। ওই ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। আমরা চাইব বাকি সবাইকে গ্রেপ্তার করে তাদের পেছনে কারা আছে, উদ্যোক্তা কারা, কেউ অর্থায়ন করে কি না, পৃষ্ঠপোষকতা কারা করে, তা তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

প্রশ্ন

হামলার ঘটনার পর মেয়েদের ফুটবলে আসতে আগ্রহ কমবে কি?

সাইফুল ইসলাম: মানুষ একটু ভয় পাবে, স্বাভাবিকভাবে আগ্রহ কিছুটা কমবে। তবে মানুষ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াবে, তখন আগ্রহ বাড়তে থাকবে।

প্রশ্ন

এ ধরনের সংকট এড়াতে দীর্ঘ মেয়াদে কী করা যেতে পারে?

সাইফুল ইসলাম: ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মৌলবাদীরা সুবিধা ভোগ করে। সামাজিকভাবে তাদের পরাস্ত করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর ফুটবল পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আমাদের ফুটবলে অর্থায়নের সংকট আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে।