প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ চট্টগ্রামের হালদা নদীতে নৌ পুলিশের বসানো সব কটি সিসি ক্যামেরা অবশেষে সচল করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিনভর ও গতকাল বুধবার সকাল থেকে একজন প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে একদল টেকনিশিয়ান কাজ করে ৮টি ক্যামেরার মধ্যে নষ্ট ৪টি ক্যামেরা সচল করেন।
এর আগে গত শনিবারের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় হালদায় ‘নৌ পুলিশের লাগানো সিসি ক্যামেরার অর্ধেক নষ্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখে নৌ পুলিশের সদর দপ্তর ঢাকার অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবদুল আলীম মাহমুদ তাৎক্ষণিকভাবে হালদায় পর্যবেক্ষণে সব ক্যামেরা সচল করার উদ্যোগে নেন। তিনি নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিনকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। এরপর মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান টেকনো কম্পিউটার টেকনোলজিস্টের টেকনিশিয়ানরা নষ্ট হওয়া চারটি ক্যামেরা সচল করেন।
২০২১ সালে হালদায় মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদী পর্যবেক্ষণে আটটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা বসানো হয় নদীর হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সিরহাট এলাকায় দুই কিলোমিটারজুড়ে। এতে নদীর প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার এলাকা নজরদারির আওতায় আসে। রামদাস মুন্সিরহাটের নৌ পুলিশ ফাঁড়ির কর্মীরা ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির দায়িত্ব পান। এর মধ্যে এক বছর আগে চারটি ক্যামেরা বজ্রপাত ও কারিগরি ত্রুটিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নদী পর্যবেক্ষণে গতি কমে যায় নৌ পুলিশের। ঝুঁকিতে পড়ে নদীর জীববৈচিত্র্য।
নৌ পুলিশ জানায়, অবৈধভাবে মাছ শিকার, ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল ও বালু তোলা বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রেখে আসছে নদীতে বসানো এসব ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরায় মাছ শিকারসহ অবৈধ কোনো কার্যক্রম চোখে পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
নৌ পুলিশের কর্মকর্তারা আরও জানান, হালদায় বসানো সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও নৌ পুলিশের ঢাকায় অবস্থিত উপমহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকেও নদীতে নজরদারি করা হয়। এতে নদীতে জাল পেতে মা মাছ শিকারসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় নদীতে থাকা বিপন্ন ডলফিনের মৃত্যুর হারও কমে এসেছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এখন আবার নদীর মূল প্রজনন এলাকা পর্যবেক্ষণে থাকবে পুলিশের। অচল সব ক্যামেরা অবশেষে সচল করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, সরাসরি সব ক্যামেরা সচল দেখা গেল। এ জন্য তিনি নৌ পুলিশ এবং প্রথম আলোকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, এটি একমাত্র নদী যেটিতে প্রযুক্তিগত পর্যবেক্ষণ চালায় পুলিশ। সেই কার্যক্রম ধরে রাখতে হবে।
নৌ পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার আ ফ ম নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলোর প্রতিবেদন দেখে নৌ পুলিশের সদর দপ্তর ঢাকার অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবদুল আলীম মাহমুদ তাঁকে দ্রুত নদীপারের ক্যামেরা সচল করতে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এরপর তিনি অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা সব ক্যামেরা সচল করার ব্যবস্থা নেন তিনি।