হামলা–ভাঙচুরের পর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র
হামলা–ভাঙচুরের পর চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র

স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে চাঁদপুরের মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র

কয়েক মাস আগেও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যেত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মোহনপুর গ্রামে মেঘনার বেলাভূমিতে গড়ে ওঠা মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্র। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের হইচই, কোলাহল ও ছোটাছুটিতে সরগরম থাকত এলাকাটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্রের মালিকের দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্রটির বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চালানো হয় লুটপাট।

গত সংসদ নির্বাচনের পরে হামলা–ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর প্রায় আট মাস পর্যটনকেন্দ্রটি বন্ধ ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি পর্যটনকেন্দ্রটি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সম্প্রতি আদালতে দুটি মামলা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন পর্যটনকেন্দ্রের মালিক ও মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী মিজান। কাজী মিজান ২০২১–২২ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ছিলেন। পরে তিনি ওই কমিটি থেকে বাদ পড়েন। মোহনপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক শত্রুতা ঘিরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে কাজী মিজানের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হামলা–মামলা চলে আসছে। পরবর্তী সময়ে সংসদ নির্বাচনের সময় দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। এর জেরে মোহনপুর পর্যটনকেন্দ্রের সব স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন মোফাজ্জল হোসেনের লোকজন। এমনকি শিশুদের বিভিন্ন রাইডসের যন্ত্রপাতিও খুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মোহনপুরে ৬০ একর জায়গাজুড়ে তৈরি করা পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশপথের তিনটি ফটক, সীমানাপ্রাচীর, পর্যটন মার্কেটের দোকান ও রিসোর্টের বিভিন্ন ভবনের দরজা–জানালা ভাঙচুর করা। সেখানে দেয়াল ছাড়া কিছুই নেই। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেখানে কোনো কার্যক্রম নেই।

পর্যটনকেন্দ্রের কর্মচারী পারুল বেগম বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মায়ার লোকেরা হামলা চালিয়ে পর্যটনকেন্দ্র ধ্বংস করে দেওয়ার পর আট মাস ধরে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যেখানে ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। তাঁরা চার–পাঁচজন নতুন করে আবার কাজ শুরু করেছেন।

মোহনপুরে পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্টের বিভিন্ন ভবনের দরজা–জানালা ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানে দেয়াল ছাড়া কিছুই নেই

পর্যটনকেন্দ্রের মালিক কাজী মিজান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নৌকার বিপরীতে চেয়ারম্যান নির্বাচন করে জয়লাভ করায় স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মায়া আমার বিরুদ্ধে লাগতে শুরু করেন। সংসদ নির্বাচনে আমি তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কাজ করি। এই ক্ষোভে তাঁর লোকেরা আমার পর্যটনকেন্দ্রে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত একের পর এক হামলা চালায়। পর্যটনকেন্দ্রের ভেতরের সবকিছু লুটপাট ও ভাঙচুর করে নিয়ে যায়। এতে আমার ৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য আমি নিজে বাদী হয়ে আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেছি। আশা রাখছি, আদালতে এর বিচার পাব।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পর্যটনকেন্দ্রটি চালুর সময় স্থানীয় অনেক মানুষের আয় বেড়েছিল। এখন সেটি বন্ধ থাকায় অনেকের আয়ে প্রভাব পড়েছে।

মোহনপুর লঞ্চঘাটের দোকানদার আলী আজ্জম বলেন, ঘাটে পর্যটনকেন্দ্র চালু হওয়ার পর তিনি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছর ভালোই ছিলেন। কিন্তু গত সংসদ নির্বাচনের পর সেটি বন্ধ হওয়ার পর তাঁর বেচাবিক্রি কমে যায়। পর্যটনকেন্দ্র চালু হওয়ার পর তিনি প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা বেচাকেনা করতেন। এখন এক–দেড় হাজার টাকাও বেচাবিক্রি নেই। তাঁর মতো অনেকের এমন সমস্যা হয়েছে।