বকেয়া মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছেন এনটিসির চা–শ্রমিকেরা

বকেয়া মজুরির দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছে এনটিসির চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পদ্মছড়া চা বাগানে
ছবি: প্রথম আলো

পাঁচ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করে যাচ্ছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চা-শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশের এনটিসির চা-বাগানগুলোয় শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। চা–বাগানগুলোয় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করছেন শ্রমিকেরা।

এর আগে গত রোববার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এনটিসির বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকনেতারা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন। আন্দোলনরত চা-শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের পাঁচ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে। আগামীকাল বুধবার সেটা ছয় সপ্তাহ হবে। মজুরি না পেয়ে শ্রমিকেরা অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মালিকপক্ষ বকেয়া মজুরি পরিশোধ না করলে কাজে না ফেরার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে, সারা দেশে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি চা–বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার চা-শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের ওপর আরও ৩০ হাজার মানুষের ভরণপোষণ নির্ভর করে।

পদ্মছড়া চা-বাগানের বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য বিজয় কুমার গোয়ালা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন আজ। আমরা মজুরি পাই না প্রায় ছয় সপ্তাহ হয়ে গেল। আমাদের শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই। তাঁরা অনেক কষ্ট করে চলছেন। এখন পেটে ক্ষুধা নিয়ে শ্রমিকেরা কাজ করবেন না বলে জানিয়েছেন। আমরা তিন দিন নিজ নিজ চা–বাগানে কর্মসূচি পালন করব। আগামী বৃহস্পতিবার সব চা–বাগানের শ্রমিকেরা একত্র হয়ে বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সভা–সমাবেশ করছি। আমাদের ন্যায্য মজুরি না পেলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরি প্রথম আলোকে বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন চা–শ্রমিকেরা গতকাল সোমবার থেকে কাজে যাচ্ছেন না। হবিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত এই কোম্পানির তিনটি চা–বাগানে শ্রমিকেরা আরও তিন–চার দিন আগে থেকেই কাজে যাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সমস্যা চলছে। এ পর্যন্ত ছয় সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকেরা এক সপ্তাহের মজুরি না পেলে অবর্ণনীয় সমস্যায় পড়তে হয়। মজুরি কবে দেওয়া হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিতে পারছে না। এনটিসির শ্রমিকেরা মজুরি বৃদ্ধি বা নতুন কোনো দাবি নিয়ে ধর্মঘট করছেন না। আজ পাওনা পরিশোধ করলে পেট ভরে ভাত খেয়ে আগামীকাল কাজে যেতে শ্রমিকেরা প্রস্তুত।’

এ বিষয়ে এনটিসির মহাব্যবস্থাপক এমদাদুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য তাঁরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পরিচালনা পর্ষদ পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছেন, শিগগিরই পরিচালনা পর্ষদের পূর্ণাঙ্গ গঠন হবে এবং শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এখন চা-বাগানগুলোয় উৎপাদনের সময়, এখন যদি শ্রমিকেরা কর্মবিরতিতে যান, তাহলে চা-বাগানের অনেক ক্ষতি হবে।