নিকলীর ছাতিরচর গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জিল্লুর রহমান ব্যতিক্রমী এ বৃক্ষ বানিয়েছেন।
কাচের ফ্রেমের সামনের দিক লাল-সবুজ পতাকা মোড়ানো। পতাকা সরালেই চোখে পড়বে কাঠের বৃক্ষ। কৃত্রিম এই বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা আর পাতায় পাতায় লেখা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যের নাম। গাছের কাণ্ড, শাখা, পাতা—সবই কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে। নামগুলোর পাশে লাগানো আছে বৈদ্যুতিক বোতাম। নির্দিষ্ট কোনো বোতামে চাপ দিলেই বাতি জ্বলে নামটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কিশোরগঞ্জের নিকলীর ছাতিরচর গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জিল্লুর রহমান ব্যতিক্রমী এ বৃক্ষ বানিয়েছেন। তিনি এই বৃক্ষের নাম দিয়েছেন ‘মুজিববৃক্ষ মডেল’। বৃক্ষজুড়ে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর ৮৬ স্বজনের নাম।
কাচের ফ্রেমসহ পুরো কাঠামোর দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫ ফুট। তবে কাঠের গাছটির দৈর্ঘ্য ৪ ফুট। প্রতিদিনই জিল্লুরের তৈরি বৃক্ষটি দেখতে আশপাশের মানুষ ভিড় করছেন। বর্তমানে মুজিববৃক্ষটি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
বাজিতপুরের সরারচর এলাকা থেকে মুজিববৃক্ষটি দেখতে এসেছেন জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি কাঠের তৈরি অনন্য একটি শিল্পকর্ম। এর মাধ্যমে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও সহজে জাতির জনকের পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে জানতে পারবে।
গাছের কাণ্ড থেকে শুরু করে শাখা-প্রশাখায় লেখা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল ও রাসেলের নাম। আছে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য আত্মীয়স্বজনেরও নাম। ১৯৭৫ সালে জাতির জনকসহ তাঁর স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে। তাই ওই বৃক্ষে ১৫ আগস্টে শহীদদের নাম স্থান পেয়েছে গাছের লাল পাতায়। বাকি পাতাগুলো সবুজ।
জিল্লুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই তিনি এই কৃত্রিম বৃক্ষ বানিয়েছেন। গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে বৃক্ষ মডেলটি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করা হচ্ছে।
জিল্লুর রহমান জানান, স্থানীয় কাঠমিস্ত্রির সাহায্য নিয়ে প্রায় ৪০ কেজি ওজনের পুরো কাঠামোটি দাঁড় করাতে সময় লেগেছে দুই বছর। কাঁঠাল কাঠের ফ্রেম আর মেহগনি কাঠের তৈরি এই বৃক্ষ তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। মুজিববৃক্ষের মডেলটি উদ্বোধন করেছেন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন। তবে বর্তমানে মুজিববৃক্ষটি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
শিক্ষক জিল্লুর রহমানের ইচ্ছা, তিনি মুজিববৃক্ষের মডেলটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে হস্তান্তর করতে চান। জিল্লুর বলেন, এই বৃক্ষের মডেল অনুসারে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তিনি আরেকটি বড় কৃত্রিম গাছ তৈরি করতে চান। সেই লক্ষ্যে কিছুদিন আগে বৃক্ষটি কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, জিল্লুর রহমানের মুজিববৃক্ষের পরিকল্পনাটি প্রশংসনীয়। বৃক্ষটি নিকলী-বাজিতপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়েছে। জিল্লুরের ইচ্ছা অনুযায়ী শিল্পকর্মটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।