ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরীক্ষা চলাকালে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়ল ৩০ ছাত্রী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা চলাকালে ৩০ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে ১২জনকে রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি করা হয়
 ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলাকালে একে একে ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আজ রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ওই শিক্ষার্থীরা গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছুদিন আগে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জয়ারমুখের ক্যানসারের প্রতিরোধে হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)  টিকা দেওয়া হয়। এরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোববার শ্বাসকষ্ট হওয়ার পর বিদ্যালয়ের ৩০ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ওই ছাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি মেডিকেল টিম গঠন করে দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

অসুস্থ হয়ে পড়া ৩০ ছাত্রীর মধ্যে ১২ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলো নবীনগর উপজেলা কাইতলা মধ্যপাড়া গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তায়েবা আক্তার ও সামিয়া আক্তার, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া আক্তার ও আখি নূর, গোয়ালী গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা আক্তার, শিমু আক্তার ও একই গ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রী কাইফা আক্তার, কলেপাড়া গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী অম্রিতা সাহা, পশ্চিমপাড়ার একই শ্রেণির ছাত্রী ইতি মনি, বল্লবপুরের নবম শ্রেণির ছাত্রী সায়াম বেগম, সৈয়দপাড়ার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সৈয়দা রাফা ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তায়েবা আক্তার।

বিদ্যালয়ের অসুস্থ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রীরা জয়ারমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা নেয়। রোববার সকালে বিদ্যালয়ে সব শ্রেণির ৩০ নম্বরের মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা চলাকালে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাইফার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপর একে একে সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ছাত্রীদের প্রথমে পাশের কসবা উপজেলার চারগাছ এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে সাতজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাকি শিক্ষার্থীদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনা হয়। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন।

বেলা সোয়া একটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতন কুমার ঢালী, সিভিল সার্জন মোহাম্মদ রোমান মিয়া, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন ভূইয়া ও গোপাল পাল মেডিসিন ওয়ার্ডে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে যান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেন, মানসিক চাপ বা ফোবিয়া থেকে এমন হচ্ছে। টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। এটিকে সাইকোজেনিক হাইপার ভেনটিলেশনও বলে। এ কারণে রক্ত থেকে অতিরিক্ত কার্বন ডাই–অক্সাইড বের হয়ে যায়। তখন রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এতে রোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোগীরা লম্বা লম্বা শ্বাস নিতে শুরু করে।

অসুস্থ হয়ে পড়া অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিশু আক্তার ও তায়েবা আক্তার এবং নবম শ্রেণির ছাত্রী ইতি মনি বলে, ‘অসুস্থ হওয়ার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের ধরেন না। অন্যদের কাছে যেতে নিষেধ করেন। আমাদের তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। হাত-পা ঝিমঝিম ও পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছিল। বুকে ব্যথা ও ‍খিঁচুনি শুরু হয়। হাত-পা কেমন যেন টান টান লাগছিল। জরায়ুর ‍মুখে ক্যানসার প্রতিরোধের টিকা নেওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝে জ্বর আসছে।’

তবে এই বিষয়ে কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক মো. আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের হঠাৎ খিঁচুনি, বুকে ব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা অনুভবসহ বুকব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মূল্যায়ন পরীক্ষা চলাকালে একে একে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এটি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তা না হলে অসুস্থ হচ্ছে কেন। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হোক।

প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘গত ২২ অক্টোবর ২০০ থেকে ২৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত।’    

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ নোমান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের টিকা নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর কোনো প্রতিক্রিয়া সাধারণত দেখা দেয় না। এটিকে মাস সাইকোজেনিক ইলনেস বলে। একজন অসুস্থ হলে আশপাশের আরও মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমরা তিন সদস্যের একটি মেডিকেল দল গঠন করেছি। তাদের সরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’