পাবনা গণপূর্ত কার্যালয়ে আবারও যুবলীগের সাবেক এক নেতা দলবল নিয়ে ঢুকে নির্বাহী প্রকৌশলীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ ও বিপক্ষের ঠিকাদারদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গত সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটলেও দুই দিনে কোনো মামলা হয়নি। কোনো ব্যবস্থাও নেননি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অভিযুক্ত ওই যুবলীগ নেতার নাম শেখ লালু। এর আগে ২০২১ সালের ৬ জুন যুবলীগ নেতা শেখ লালু, ফারুক হোসেনসহ আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা গণপূর্ত কার্যালয়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। ওই ঘটনার পর তাঁদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে জেলা প্রশাসন। একই সময় শেখ লালুকে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
গণপূর্ত বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী তাঁর কক্ষে তুষার হোসেন নামের এক ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় শেখ লালু দলবল নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর শেখ লালু ও ঠিকাদার তুষার হোসেনের লোকজন কক্ষ থেকে উত্তেজিতভাবে বাইরে চলে আসেন। তাঁরা কার্যালয়জুড়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় লিপ্ত হন ও হাতাহাতি শুরু করেন। এতে কার্যালয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা শেখ লালু বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী সব কাজেই পক্ষপাতিত্ব করেন। অধিকাংশ কাজ পছন্দের ঠিকাদার তুষার হোসেনকে দেন। সামনে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কাজ আছে। আমরা সে কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে গিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তাঁর পছন্দের ঠিকাদার তুষার আমাদের ওপর চড়াও হয়েছেন। মারধর করেছেন। আমরা কাউকে মারধর করিনি।’
নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বেলা পৌনে একটার দিকে শেখ লালু লোকজন নিয়ে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন। ভেতরে এসে কোনো কথাবার্তা ছাড়া অকথ্য গালিগালাজ শুরু করেন। নিজের প্রভাব ও ক্ষমতার কথা বলতে থাকেন। ভবিষ্যতে বড় কাজ না দিলে অফিসে আসতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন। তিনি অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কাজ দেওয়া সম্ভব নয় জানালে শেখ লালু মারমুখী আচরণ শুরু করেন। এ সময় তাঁর কক্ষে থাকা ঠিকাদার তুষার হোসেন শেখ লালুকে বাইরে নিয়ে যান। পরে ঠিকাদারদের দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তাঁদের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে থাকা ঠিকাদার তুষার হোসেন বলেন, ‘একটি বকেয়া বিলের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে তিনি আলাপ করছিলেন। এ সময় শেখ লালু দলবল নিয়ে কক্ষে ঢুকে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে ধমকাতে থাকেন। বিভিন্ন হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। আমরা তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলে তিনি আমাদের ওপর চড়াও হন। বাইরে নিয়ে মারধর করেন। তিনি এর আগেও গণপূর্ত বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিতে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছেন।’
জানতে চাইলে পাবনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ধরনের ঘটনাকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ঘটনায় গণপূর্তর পক্ষ থেকে কোনো মামলা বা অভিযোগ পাইনি।’
এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেবাশীষ কুমার রায় বলেন, ‘আমাকে নির্বাহী প্রকৌশলী অফিশিয়ালি কিছু জানাননি। এরপরও আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেব।’