বাঞ্ছারামপুর উপজেলা

পুলিশ হেফাজতে তরুণকে নির্যাতনের অভিযোগ, নিরাপত্তা চেয়ে এসপির কাছে আবেদন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে আবদুল আহম্মদ ওরফে রুবেল (২৬) নামের এক তরুণকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে থানায় পুলিশ হেফাজতে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আবদুল আহম্মদের মা আমেনা বেগম ও তাঁর বোন লতিফা আক্তার।

গতকাল মঙ্গলবার ডাকযোগে পাঠানো মা-মেয়ের এ অভিযোগ আজ বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছেছে। অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। এর আগে গত রোববার দুপুরে ওই তিনজনকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবদুল আহম্মদের মা বাদী হয়ে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপারকে জানানোসহ কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করে গত সোমবার মামলাটি খারিজ করে দেন জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার।

আবদুল আহম্মদ উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের লিল মিয়ার ছেলে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন বাঞ্ছারামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন ও উপজেলার দুর্গাপুরের মধ্যপাড়ার রবি উল্লাহ।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রবি উল্লাহ সঙ্গে আবদুল আহম্মদের পরিবারের বিরোধ চলছে। রবি উল্লাহর বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতে মামলা করেছেন। ১৪ মার্চ বিকেলে রবি উল্লাহর প্ররোচনায় ও এএসআই আল আমিন সঙ্গে সাদাপোশাকদারী চারজন পুলিশ সদস্য বসতবাড়ি থেকে আবদুল আহম্মদকে গ্রেপ্তার করেন। ঘটনাস্থলে তাঁকে এলোপাথারি কিল–ঘুষি, লাথিসহ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে জখম করেন তাঁরা। তাঁরা এক পর্যায়ে আবদুল আহম্মদকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যান। রবি উল্লাহর কথা মতো পুলিশ পরিদর্শক তরুণ কান্তি দে ও এএসআই আল থানায় দফায় দফায় কাঠের রুল ও লাঠি দিয়ে আবদুল আহম্মদকে এলাপাথারি পেটান। সেখানে তাঁর ওপর পুলিশি নির্যাতন করা হয়। মারধরে আবদুল আহম্মদের পুরো শরীরে মারাত্মক রক্তাক্ত ফুলা জখম হয়। ১৪ মার্চ বিকেলে গ্রেপ্তার করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে আদালতে পাঠায়নি পুলিশ। থানায় শারীরিকভাবে নির্যাতন অব্যাহত রাখলে আবদুল আহম্মদের মা সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেন।

বিষয়টি জেনে দুই পুলিশ সদস্য তড়িঘড়ি করে ১৬ মার্চ দুপুরে আবদুল আহম্মদকে একটি মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠান। আদালতের পুলিশ সদস্যরা শরীরে জখম দেখে তাঁকে গ্রহণ না করে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। সে সময় আদালতে যাওয়া কয়েকজন পুলিশ কনস্টেবল পুলিশ পরিদর্শক ও এএসআইয়ের পরামর্শে আবদুল আহম্মদকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে বেলা তিনটার দিকে তাঁকে আবার আদালতে নেওয়া হয়। আদালত তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আবদুল আহম্মদের স্ত্রী মায়া মনি ও শাশুড়ি আমেনা বেগম বলেন, ‘১৪ মার্চ গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার অধিক সময় পুলিশ হেফাজতে রেখে নির্যাতন করে ১৬ মার্চ আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। বিনা কারণে তাঁকে নির্যাতন করেছে পুলিশ। এখন আমরা পুলিশের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। নিরাপত্তা চেয়ে ঘটনা উল্লেখ করে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত পাঠিয়েছি।’

একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন না ধরায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তরুণ কান্তি দে এবং এএসআই আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রবি উল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাই বাহরাইনপ্রবাসী মইনুদ্দীন তার (আবদুল আহম্মদ) কাছে দুইটা বিস্কুট (সোনার বার) দিছিল। সে এসব আত্মসাৎ করেছে। আমার ভাই থানায় একটা অভিযোগ দিছে। পুলিশ তারে ধরছে সত্য, কিন্তু মাইরধর করছে না।’

বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েছি। কোনো নির্যাতন করা হয়নি।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরে অভিযোগটি পেয়েছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’