আচরণবিধি ভেঙে অস্ত্রধারীসহ শোডাউন দিয়ে পাটমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র দাখিল

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে মিছিলে লাল গেঞ্জি পরিহিত এই ব্যক্তির কাধে অস্ত্র দেখা যায়। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অস্ত্রধারীসহ শোডাউন দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বুধবার দুপুরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হকের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন।

প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা ওই ব্যক্তির নাম মো. জামান। তিনি কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ওরফে কলির দেহরক্ষী। ঘটনার পর ওই দেহরক্ষীকে আটকের পাশাপাশি অস্ত্রটি জব্দ করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গোলাম দস্তগীর গাজীর মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দুপুরে উপজেলার মঠের সামনে ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। পরে মিছিল নিয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গোলাম দস্তগীর গাজী মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। এ সময় সড়কের দুই পাশে তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা অবস্থান নিয়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দেন। একই সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রসুল কর্মীদের নিয়ে মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ এলাকা থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত একটি মিছিল করেন। এ সময় তাঁর অস্ত্রধারী দেহরক্ষী জামানকে প্রকাশ্যে কাঁধে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। লাল গেঞ্জি পরিহিত ওই অস্ত্রধারী পাটমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র দাখিল করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। মিছিলের সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁর ছবি তুললে তিনি অস্ত্র নিয়ে মিছিলের ভেতরে চলে যান।

অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ নেতার দেহরক্ষী। পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মনোনয়নপত্র দাখিল করার জন্য তাঁরা ইউএনওর কার্যালয়ে এসেছেন। ওই মিছিলে গোলাম রসুল আছেন। পরে তিনি দ্রুত মিছিলের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

মিছিল করার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁর ছবি তুললে তিনি (মিছিলের দ্বিতীয় সারিতে) অস্ত্র নিয়ে দ্রুত মিছিলের ভেতরে চলে যান

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালার ৮(খ) ধারায় বলা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রার্থী কোনো ধরনের মিছিল কিংবা শোডাউন করতে পারবেন না। ১১(ঘ) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের অনুমোদন ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি অস্ত্র বহন করতে পারবেন না।

নিজের দেহরক্ষীর নামে অস্ত্রটির অনুমোদন নেওয়া আছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রসুল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর বীর প্রতীকের মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেহরক্ষী জামানসহ তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। দেহরক্ষী তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ তাঁর ওপর কয়েকবার হামলা করায় নিরাপত্তার জন্য প্রথমে দুজন এবং বর্তমানে একজন দেহরক্ষী নিয়েছেন।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধনসহ অস্ত্রটি পুলিশের হেফাজতে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি ফোন করে জানান, অবৈধভাবে অস্ত্র প্রদর্শন করায় অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছে।

অস্ত্রসহ শোডাউন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করাকে আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন একই আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দলটির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ‘এভাবে অস্ত্রধারী নিয়ে শোডাউন করে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা ওই ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছে

এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্র থানায় জমা নেওয়া হয়। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ মিছিল করে থাকলে সেটা আইনের ব্যত্যয়। অভিযোগ ও যথাযথ প্রমাণ পেলে অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রদর্শন করা অস্ত্রটি জব্দ করা হয়েছে। ওই আওয়ামী লীগ নেতার দেহরক্ষী জামানকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অস্ত্রের নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।