দৌলতখানে মেঘনার চরের দখল নিয়ে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণ, আহত ৩০

ভোলা জেলার মানচিত্র
ভোলা জেলার মানচিত্র

ভোলার দৌলতখান উপজেলার মেঘনা নদীর মাঝে জেগে ওঠা চর নেয়ামতপুরের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে আজ সোমবার দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সংঘর্ষ চলাকালে লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. তায়েবুর রহমান বলেন, আহত ব্যক্তিদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে কেউ গুলিবিদ্ধ হননি।

ভোলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে মেঘনা নদীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ নেয়ামতপুর চরের অবস্থান। এখানে প্রায় ৪ হাজার একর জমি আবাদযোগ্য। আরও ২ হাজার একর জমি আছে গবাদিপশুর চারণভূমি হিসেবে। নেয়ামতপুর চরটি উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের অংশ।

সিকস্তি ও পয়স্তি আইনে বলা হয়েছে, রেকর্ডীয় সম্পত্তি নদীতে ভেঙে যাওয়ার ৩০ বছরের মধ্যে জেগে উঠলে এবং খাজনা পরিশোধ থাকলে মালিকপক্ষ আদালতে মামলা করে জমির মালিকানা ফেরত পেতে পারে। চর নেয়ামতপুর মেঘনায় ভেঙে যাওয়ার পর জেগে ওঠা এ রকমই একটি ভূখণ্ড। তবে বিএনপি সরকারের সময় এই চর নিয়ে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ভূমিহীনদের (কার্ড হোল্ডার) জন্য জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এই দুই পক্ষের মধ্যেই এখন চরের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে।

দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম নবী নবু ও ভুট্ট পিটারের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ লোক দা, বঁটি, আগ্নেয়াস্ত্র চালিয়ে চরের ৫০০ বস্তা সয়াবিন, ৮২টি ভেড়া, ৮টি ছাগল, ৪০০ হাঁস, ৫০টি মুরগিসহ ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন।
মো. বসির হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক, নেয়ামতপুর চর মালিক সমিতি

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আজ দুপুরে দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম নবী নবু, ভুট্ট পিটারের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ লোক ১২টি ট্রলারে এসে চরের লোকজনের ওপর সশস্ত্র হামলা চালান। হামলাকারীরা চরে উঠেই গুলি ছুড়তে থাকেন। যাঁকে সামনে পান, তাঁকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় কৃষকের উঠান থেকে বস্তাভর্তি সয়াবিন, মাঠের চরা গরু, ভেড়া, ছাগল ও খামারের হাঁস-মুরগি লুট করে নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, লুটপাট প্রতিরোধে কৃষকেরা একত্র হলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। চরবাসীর প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা কৃষকদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পিছু হটতে বাধ্য হন। বেলা ২টা পর্যন্ত চলে এ হামলা, লুটপাট, সংঘর্ষ। এ সময় দুই পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর জখম ব্যক্তিদের ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চরের সাধারণ কৃষকেরা জানান, জোতদারের লোকজনকে বার্ষিক টাকা দিয়ে জমি লগ্নি নিয়ে তাঁরা চাষাবাদ ও বসবাস করছেন। তাঁদের কষ্টার্জিত ফসল ও গবাদিপশু লুট করে নিয়ে গেছেন দৌলতখান ও ভোলার লোকজন। তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। তাঁরা নিরাপত্তার জন্য চরে একটি পুলিশ ক্যাম্পের দাবি জানান।

নেয়ামতপুর চর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বসির হাওলাদার বলেন, দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম নবী নবু ও ভুট্ট পিটারের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ লোক দা, বঁটি, আগ্নেয়াস্ত্র চালিয়ে চরের ৫০০ বস্তা সয়াবিন, ৮২টি ভেড়া, ৮টি ছাগল, ৪০০ হাঁস, ৫০টি মুরগিসহ ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন।

ওই সমিতির সভাপতি মো. ফেরদৌস হাজি বলেন, তাঁরা চরের প্রকৃত মালিক। বিএনপি সরকারের আমলে এসব জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। তাঁরা আদালতে মামলা করলে তিনবার তাঁদের পক্ষে রায় পেয়েছেন। আরও একটি মামলা চলমান। ওই মামলার রায় পেলে তাঁরা খাজনা দিতে পারবেন। তবুও কার্ড হোল্ডাররা বারবার চর দখল করতে এসে সাধারণ কৃষকের ফসল ও গবাদিপশু লুটপাট করছেন।

দৌলতখান উপজেলার ভবানীপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম নবী তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁরা দৌলতখান থানা-পুলিশের অনুমতি নিয়ে নেয়ামতপুর ও হাজারির চরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুর আলম খানের (কাপ-পিরিচ প্রতীক) পক্ষে ভোটের প্রচারণা ও পিকনিকের উদ্দেশে চারটি ট্রলার নিয়ে বের হয়েছিলেন। চরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে চরবাসী ও নোয়াখালীর লাঠিয়াল বাহিনী ফেরদৌস হাজি, ইউসুফ জিলাদার ও বশির হাওলাদারের নেতৃত্বে তাঁদের ঘিরে ধরেন। তাঁদের পিকনিকের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন। তাঁদের ২০ জনকে তাঁরা আটকে রেখেছেন।

গোলাম নবীর অভিযোগের ব্যাপারে বশির হাওলাদার বলেন, ‘আমরা তো চরেই ছিলাম না। চরে যাওয়ার পরে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। হামলাকারীদের কোনো লোক আটক করে রাখিনি।’

ভোলা জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রতন চন্দ্র সরকার বলেন, প্রকৃত ঘটনা চরে না গিয়ে, তদন্ত না করে বলা যাবে না। তবে গোলাম নবীকে বিরোধপূর্ণ ওই চরে যাওয়ার জন্য পুলিশ অনুমতি দেয়নি। বরং তাঁদের যাওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়।