সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে

বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৩৮ সেন্টিমিটার। পানি বাড়ছে হাওরেও। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৫১৩ মিলিমিটার। ফলে ভাটির জেলাটিতে পাহাড়ি ঢলে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে আজ শনিবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫৯ মিটার। এর আগের দিন একই সময়ে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫ মিটার। সেখানে ২৪ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ৫৫ সেন্টিমিটার। এই স্থানে নদীটির পানির বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৮০ মিটার। সে হিসাবে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে।

সুনামগঞ্জের ছাতক শহরের কাছে সুরমার পানি আজ সকাল ৯টায় ছিল ৮ দশমিক ৭৬ মিটার। আগের দিন একই স্থানে পানি ছিল ৮ দশমিক ২৮ মিটার। সেখানে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের জাদুকাটা, পাটনাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, রক্তি, বৌলাই—সব নদীর পানি বেড়েছে।

উজানের ঢলে জেলার দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়নগুলোর কিছু কিছু গ্রামীণ সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, গতকাল রাতে পাহাড়ি ঢল নেমেছে বেশি। তাই উপজেলার খাসিয়ামারা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে নদীর তীর উপচে পানি গ্রামে ঢুকেছে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হলেও মানুষের বাড়িঘরে এখনো পানি প্রবেশ করেনি।

গতকাল রাতে পাহাড়ি ঢল নেমেছে বেশি। তাই উপজেলার খাসিয়ামারা নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে নদীর তীর উপচে পানি গ্রামে ঢুকেছে। লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হলেও মানুষের বাড়িঘরে এখনো পানি প্রবেশ করেনি।
সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাওর এখন পানিতে টইটম্বুর। বৃষ্টি ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা হতে পারে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীতীরের মইনপুর গ্রামের বাসিন্দা মইনুল হোসেন বলেন, মাঝে পানি কিছুটা কমেছিল। গত বৃহস্পতিবার থেকে আবার বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে। এভাবে পানি বাড়লে বন্যা হয়ে যেতে পারে।

ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নে উজানের ঢলে পানি বেড়েছে। রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। ছাতক পৌর শহরের বাঘবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ছাতকে পানি বাড়ছে। তবে এখনো বন্যা হয়নি।

আপাতত জেলায় বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার।

আপাতত জেলায় বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে জেলার নদ-নদীর পানি আবার কিছুটা বেড়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। বন্যা হলে স্বল্প মেয়াদে মাঝারি বন্যা হতে পারে।