খুলনার পাইকগাছায় এক গৃহবধূর (৪৫) চোখে-মুখে আঠা লাগিয়ে এবং হাত-পা বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই গৃহবধূ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। গৃহবধূর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে। সব ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে রেখেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় খুলনা মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ফরিদ-উজ-জামান বলেন, কারও মস্তিষ্ক চরমতম বিকৃত না হলে এমন নৃশংস কাজ করতে পারে না। অনেকের মধ্যে ‘সাইকোপ্যাথ’ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোনো না কোনো সময় সেটি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে কি না, বা তখনকার পরিস্থিতি ধর্ষণকারীদের এমন নির্যাতন করতে উৎসাহিত করেছে কি না, তা জিজ্ঞাসাবাদ করলে বোঝা যাবে।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গৃহবধূকে ধর্ষণের পাশাপাশি তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। চোখ ও মুখ আঠা দিয়ে আটকে কাউকে এভাবে নির্যাতন বা ধর্ষণ করার মতো এমন ঘটনা এর আগে তাঁরা দেখেননি।
চোখের পাতা ও ঠোঁটে শক্ত আঠা দিয়ে আটকে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে পাইকগাছা থানায় মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করা হয়েছে। ওই রাতে বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা খোয়া যাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।
গৃহবধূর স্বামী বলছেন, এ ঘটনায় তাঁরা কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না। এলাকার সবার সঙ্গেই তাঁদের ভালো সম্পর্ক। কেন ও কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না।
মামলা, স্বজন ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঘরের মধ্যে ওই গৃহবধূর গোঙানির শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। পরে গৃহবধূকে ঘর থেকে হাত-পা বাঁধা ও চোখ-মুখ আঠা দিয়ে আটকানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয়, তখন অচেতন ছিলেন। পরদিন সোমবার সকালে অচেতন অবস্থায় তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। ওই দিন রাতে গৃহবধূর চেতনা ফেরে। গতকাল সকাল পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। দুপুরের দিকে কথা বলতে পারলেও সেদিন রাতে কী ঘটেছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। তিনি জানান, রাত ১০টার দিকে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পরে চেতনা ফিরে দেখেন হাসপাতালে আছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ও ওসিসির সমন্বয়কারী চিকিৎসক সুমন রায় বলেন, গৃহবধূর অবস্থার আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে। ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক হয়ে উঠছেন।
এদিকে আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি কাউকে শনাক্তও করা সম্ভব হয়নি। দস্যুতা করতে এসে ধর্ষণ, না পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ করতে এসে দস্যুতা—সেই রহস্যও উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, এটি অপরাধের নতুন ধরন। এর আগে কারও চোখ ও মুখ আঠা দিয়ে আটকে নির্যাতন করার কোনো ঘটনা তাঁরা শোনেননি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে তাঁরা অপরাধী শনাক্তের চেষ্টা করছেন।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুর রহমান বলেন, অপরাধীরা বেশ অভিজ্ঞ, কোনো প্রমাণ রেখে যায়নি। ঘটনার দিন রাতে বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকারসহ ২০ হাজার টাকার কিছু বেশি নিতে পেরেছে দুর্বৃত্তরা। গৃহবধূর স্বামী মামলার এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি কারও সঙ্গে শত্রুতা আছে, এমন কথাও বলেননি। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।