তাঁদের দেশ ভিন্ন। ভাষাও আলাদা। বড় হয়েছেন পৃথক সংস্কৃতিতে। এমন অনেক অমিল থাকা সত্ত্বেও এক হয়েছেন ভালোবাসার টানে। প্রথমে পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। তারপর প্রেম। এরপর সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশে এসে বিয়ে।
বলছিলাম লক্ষ্মীপুরের যুবক রাসেল আহমেদ (৩০) ও ইন্দোনেশিয়ার তরুণী ফানিয়া আইয়প্রেনিয়ার (২৮) কথা। গত এক বছরে লক্ষ্মীপুরে এমন আরও তিনটি বিয়ে হয়। ভালোবাসার টানে বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুরে এসে বিয়ের পিড়িতে বসেন নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের চার তরুণী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চার যুগলের সম্পর্কগুলো এখনো অটুট আছে। একসঙ্গে সুখে–শান্তিতে সংসার করছেন। দেশের বাইরে বসবাস করলেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন নিয়মিত।
সাইপ্রাসে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে লক্ষ্মীপুরের যুবক মো. রাসেলের (৩৩) সঙ্গে নেপালি তরুণী জ্যোতির (২৭) পরিচয়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। পরে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। গত ২৩ নভেম্বর পরিবার ছেড়ে নেপাল থেকে বাংলাদেশে আসেন জ্যোতি। এরপর ২৮ ডিসেম্বর আদালতের অনুমতি নিয়ে তাঁরা বিয়ে করেন।
রাসেল লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঞ্চনপুর গ্রামের মনতাজুর রহমান ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে ও ছেলের বিদেশি বউ এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাঁরা সুখে–শান্তিতেই আছেন। নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তাঁদের সঙ্গে।
গত বছরের ৬ মার্চ বাংলাদেশে আসেন ইন্দোনেশিয়ার তরুণী ফানিয়া আইয়প্রেনিয়া (২৮)। তিনি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার যুবক রাসেল আহেমেদর সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসেন ৮ মার্চ। রাসেলের গ্রামের বাড়ি রায়পুর উপজেলার রাখালিয়া গ্রামে। তাঁরা দুজন এখন ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছেন।
ওই সময় রাসেল জানিয়েছেন, প্রায় চার বছর আগে ফানিয়ার সঙ্গে ফেসবুকে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। এর পর থেকে তাঁদের প্রতিদিনই কথা হতো। একপর্যায়ে তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য ফানিয়া বাংলাদেশে আসেন। বিয়ের জন্য ফানিয়া দুই মাসের জন্য এসেছেন। তাঁরা দুজন একসঙ্গে সংসার নিয়ে ভালোই আছেন।
লক্ষ্মীপুরের মামুন হোসেন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে সিতি রাহাইউ মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ সুবাদে তাঁদের পরিচয় ও প্রেম। সেই সূত্রেই লক্ষ্মীপুরে ছুটে আসেন সিতি। গত ৯ অক্টোবর আদালতে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
মামুন রায়পুর উপজেলার উত্তর কেরোয়া গ্রামের রফিক উল্লাহর ছেলে। ওই সময় মামুন জানান, ২০১৭ সালে চাকরির সুবাদে সিতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ে করতেই বাংলাদেশে এসেছেন সিতি। এক মাসের ছুটি শেষে আবার মালয়েশিয়ায় চলে যান। তাঁরা এখন মালয়েশিয়ায় রয়েছেন।
প্রেমের টানে ফিলিপাইন থেকে লক্ষ্মীপুরে আসেন জোয়ান ডিগুসমান লেগুমবাই নামের এক তরুণী। গত ৫ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী গ্রামে প্রেমিক মো. নাঈমুর রশিদের বাড়িতে তাঁর গায়েহলুদ হয়। ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের একটি রেস্তোরাঁয় তাঁদের বিয়ে হয়েছে।
নাঈম জানান, আট বছর ধরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক। এর মধ্যে তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্তে ছুটি নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। নিজের এবং ওই তরুণীর মা–বাবার সম্মতিতে তাঁকে বিয়ে করেছেন। ছুটি শেষে আবার তাঁরা মালয়েশিয়ায় ফিরে যান।
নাইমুর রশিদের বাবা নুর মোহাম্মদ বলেন, ছেলের প্রেমের সম্পর্কের কথা খুলে বলার পর তাঁরা বিয়ের বিষয়ে আর অমত করেননি। বিয়ের পর আবার তাঁরা মালয়েশিয়ায় ফিরে যান। এখন ভালোভাবে সংসার করছেন।