জিনের সহায়তায় পানি পড়া, তাবিজ-কবচ, ঝাড়ফুঁক দিয়ে নানা জটিল রোগ সারানোর দাবি করেন এই কবিরাজ।
ছিলেন দোকানের কর্মচারী। হঠাৎ করেই কবিরাজ বনে গেছেন নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় গড়িষাপাড়া মহল্লার আমিরুল ইসলাম (৩৫)। দিচ্ছেন ‘সর্বরোগের সমাধান’। আরোগ্য পাওয়ার আশায় তাঁর কাছে এসে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন মানুষ। এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতারণা চালিয়ে গেলেও প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জিনের সহায়তায় পানি পড়া, তাবিজ-কবচ, ঝাড়ফুঁক ও গাছ দিয়ে নানা রকম জটিল রোগ সারানোর দাবি করেন এই কবিরাজ। প্রেমে সফলতা, পারিবারিক কলহ নিষ্পত্তিসহ বিপথগামী জিন আসর করা ভূতকে বোতলে আটকে রাখার চিকিৎসা দেন তিনি। চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রচার–প্রচারণাও চালাচ্ছেন। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার তাঁর বাড়িতে বসছে আসর।
গত শুক্রবার আমিরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ফটকের বাইরে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ অপেক্ষা করছেন। ঘরের ভেতরে ৮ থেকে ১০ নারীর চিকিৎসা চলছে। বাড়ির সামনে কথা হয় ঢাকার সাভার উপজেলা থেকে আসা হেলেনা বেগমের সঙ্গে। সমস্যা তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ের। মেয়েকে প্রেম-ভালোবাসা থেকে দূরে রাখতে এসেছেন তিনি। হেলেনার ভাষ্য, অন্ধকার ঘরের মধ্যে তন্ত্রমন্ত্র পড়ে একটি তাবিজ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এ জন্য কবিরাজকে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তাঁর মতো অনেক নারীই নানা সমস্যার সমাধান পেতে দিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা থেকে মসলেম উদ্দিন এসেছেন তাঁর মেয়েকে নিয়ে। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ের শরীরে জিনের আসর পড়েছে। সেই জিন তাড়াতে কবিরাজের কাছে এসেছেন। আট হাজার টাকা জমা দিয়ে একটি তাবিজ পেয়েছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, আমিরুল মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হননি। সংসার চালাতে অন্যের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। বছরখানেক আগে নিজেকে বড় কবিরাজ পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রচার–প্রচারণা চালান। রোগী টানতে গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ দেন। ছাপিয়েছেন কার্ড। সেখানে ‘সর্বরোগের সমাধানের’ বিষয় উল্লেখ করেছেন তিনি। মানুষকে পানি পড়া, তাবিজ, ঝাড়ফুঁক ও গাছগাছড়া দেওয়াসহ জিন, ভূত-পেতনিকে বোতলে আটকে রাখার মন্ত্র দিয়ে মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন কথিত এই কবিরাজ।
আমিরুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে ১৪টি জিন রয়েছে। প্রতি শুক্রবার ও সোমবার তারা হাজির হয়। তাদের মাধ্যমেই নানা রোগের সমাধান দেওয়া হয়। সংসার চালানোর জন্য টাকা নিয়ে থাকেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ঝাড়ফুঁকে কোনো রোগ সারে না। সহজ সরল কিছু মানুষকে বোকা বানিয়ে বাড়তি আয় করছেন ওই কথিত কবিরাজ। গুরুদাসপুর থানার াওসি আবদুল মতিন বলেন, এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানা নেই তাঁর। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন তিনি।