শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের পাঁচ কর্মীকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল শনিবার রাতে জেলা সদরের পালং মডেল থানায় মামলাটি করেন। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের কর্মীরা বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছেন। চিকিৎসা বন্ধ থাকায় আজ রোববার সকাল থেকে কয়েক শ রোগী হাসপাতালে ভিড় করেছেন। চিকিৎসা না পেয়ে তাঁরা ভোগান্তি পোহান। তবে বেলা একটার দিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হাসপাতালের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে। মামলা করলেও পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করছে না। আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে চিকিৎসক ও নার্সরা বহির্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। তবে সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলোচনার পর দুপুর থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শনিবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর ফাইল নার্সের কাছ থেকে আনতে যান রায়হান পাহাড় নামের এক ব্যক্তি। সেখানে দায়িত্বে থাকা নার্স নাসিমা আক্তার চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে ফাইল নিতে বলেন। এ সময় রায়হান ওই নার্সের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে তাঁকে মারতে উদ্ধত হন। তখন হাসপাতালের অন্য কর্মীরা এর প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনার ১৫ মিনিট পর রায়হান বেশ কয়েকজন লোক নিয়ে হাসপাতালের কর্মীদের ওপর হামলা চালান। তখন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ব্রাদার আবু হানিফ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী দুলাল ঢালী, বাবুর্চি খালেদ সিকদার, অফিস সহকারী জোবায়ের হোসেন ও ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুমার সরকারকে মারধর করা হয়। এমন পরিস্থিতি দেখে সেখানে যান তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান। হামলাকারীরা তাঁকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা সেবাদান বন্ধ করে দেন। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুরোধে চিকিৎসক ও নার্সরা জরুরি বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে সেবা দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু বহির্বিভাগের সেবা বন্ধ রাখা হয়। এরপর শনিবার রাতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান পালং মডেল থানায় মামলা করেন। এতে রায়হান পাহাড়, ইমরান পাহাড়, আল আমীন আকন, সাকিব ও রুবেল নামের পাঁচ তরুণকে আসামি করা হয়।
আজ সকাল ১০টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ বন্ধ আছে। চিকিৎসকদের কক্ষ তালাবদ্ধ করা। কক্ষের সামনে রোগীরা ভিড় করে আছেন। ওই রোগীদের মধ্যে যাঁরা বেশি অসুস্থ, তাঁরা অনেকে জরুরি বিভাগে ভিড় করছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমানের কক্ষে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গে সভা করছিলেন সিভিল সার্জন আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ পরান।
শরীয়তপুর সদরের কাশাভোগ এলাকা থেকে জহুরা বেগম (৮০) নামের একজন রোগী নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছেন তাঁর ছেলে মোকলেছ ব্যাপারী। বহির্বিভাগে চিকিৎসক না পেয়ে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ছুটে এসেছেন জরুরি বিভাগে। মোকলেছ ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, মাকে চিকিৎসক দেখাতে এনে দেখেন চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করছেন না। গরিব মানুষ, তাই বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিতে সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। চিকিৎসক না পেয়ে দুর্ভোগের কথা জানান তিনি।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্ পরান আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছি। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বহির্বিভাগের কর্মবিরতির ঘোষণা প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দীহ আহমেদ বলেন, হাসপাতালের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শনিবার থেকে পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।