যশোরের শার্শা উপজেলার ধান্যখোলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীনের লাশ আজ বুধবার হস্তান্তর করা হয়েছে। শার্শা উপজেলার শিকারপুর ও ভারতের গাঙ্গুলিয়া সীমান্তে বিএসএফের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রতিনিধিদলের কাছে লাশটি হস্তান্তর করেন।
এর আগে গত সোমবার ভোরে মোহাম্মদ রইশুদ্দীন নিহত হন। বুধবার বিজিবির পক্ষে যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল ও সহকারী পরিচালক মাসুদ রানা লাশটি গ্রহণ করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লাশটি হাসপাতালে আনা হয় আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। সুরতহাল শেষে লাশের ময়নাতদন্ত শেষ করতে বেলা একটা বেজে যায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিদ রায়হান; যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হুসাইন; হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী প্রমুখ।
ময়নাতদন্তের বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী বলেন, লাশের তলপেটে একটি গুলি পাওয়া গেছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি বিজিবি সদস্যরা যশোর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর এলাকায় অবস্থিত ৪৯ বিজিবির প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান। দুপুরে জানাজা শেষে বিজিবি কার্যালয়ে বিজিবি কর্মকর্তারা পরিবারের সদস্যদের কাছে রইশুদ্দিনের লাশটি হস্তান্তর করেন। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিজিবি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
দুপুরে যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আহমেদ হাসান জামিলের দাপ্তরিক মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নিহত বিজিবি সদস্য রইশুদ্দীনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর সাহাপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কামরুজ্জামানের ছেলে। রইশুদ্দীনের নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাতে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল জামিল স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট-সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বিজিবি টহল দল। এ সময় টহল দলের সদস্যরা তাঁদের চ্যালেঞ্জ করলে তারা দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহি মোহাম্মদ রইশুদ্দীন চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
প্রাথমিকভাবে তাঁকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পরে ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই সৈনিকের মৃত্যু হয়। বিএসএফের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে।