রংপুরের মিঠাপুকুর

সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব গড়াল সংঘর্ষে

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের সামনে
ছবি: সংগৃহীত

কমিটি না থাকায় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ড দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হয়, যার এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, আরেক পক্ষে আছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার। এই দুই জনপ্রতিনিধির দ্বন্দ্বের জের ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের সামনে পৃথক পৃথক কর্মসূচি চলাচলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তবে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা করেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উপজেলায় দীর্ঘ চার বছরের অধিক সময় ধরে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি নেই। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জাকির হোসেন। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দলের উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মেজবাউর রহমান। সেই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর জয় হলেও দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। দলের মধ্যে বিরোধের কারণে সেখানে আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা সম্ভব হয়নি। ফলে সেখানে কমিটিবিহীন দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটি না থাকায় দলের কর্মকাণ্ড দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি পক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের অনুসারী। অন্যটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের অনুসারী।

এদিকে রংপুর-৩ (মিঠাপুকুর) আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আশিকুর রহমানের ছেলে রাশেক রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ নিয়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল।

সংঘর্ষ চলার সময় চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে রংপুরের মিঠাপুকুরে

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘রাজপথের আন্দোলনে আমি সক্রিয় রয়েছি বলেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার পরও উপজেলায় আমি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছি। তাই আমি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে মাঠে কাজ করছি।’ তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জাকির হোসেন। তিনি এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সংসদ নির্বাচনে একাধিক মনোননয়নপ্রত্যাশীর বিষয়ে এর আগে তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আমি তো আমার ছেলের জন্য মনোনয়ন চাইব। অন্যরাও চাইতে পারেন। তবে দলের নেত্রী যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, সেটিই হবে চূড়ান্ত।’

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল বিকেলে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদের মিলনায়তনে সংসদ সদস্য আশিকুর রহমানের অনুসারী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের উল্টো দিকে মিঠাপুকুর আন্ডারপাস ব্রিজের নিচে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের আলোচনা সভার আয়োজন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শঠিবাড়ী থেকে জাকির হোসেন সরকারের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা উপজেলা পরিষদের গেটে আসামাত্রই অপর পক্ষের লোকজন ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশসহ দুই গ্রুপের অন্তত অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষে আহত হন মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানও। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দায়িত্বরত অবস্থায় আমার মাথায় ইটের আঘাত লাগলেও এখন সুস্থ রয়েছি। কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’