ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না (৬০) ভারতে পালানোর সময় মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। তাঁর লাশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উমকিয়ং থানা-পুলিশের হেফাজতে আছে বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তাঁর ভাই।
ইসহাক আলী খান পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামের প্রয়াত নেছার আলী খানের ছেলে। ইসহাক আলীর আত্মীয় জসিম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমরা ইসহাক আলী খানের সঙ্গে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। তাঁরা আমাদের জানিয়েছেন, গত সোমবার উমকিয়ং থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। লাশ এখন পুলিশের হেফাজতে মর্গে আছে। আমরা দ্রুত ভারত থেকে লাশ দেশে আনার চেষ্টা করছি।’
ইসহাক আলীর বড় ভাই জাফর আলী খান আজ বুধবার রাত নয়টায় প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লাশ দেশে আনার জন্য গতকাল তিনি আবেদন করেছেন। আবেদনে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ উপহাইকমিশনারের কার্যালয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে।
স্বজনেরা জানান, শনিবার ভোররাতে মেঘালয়ের ডাউকি এলাকায় পাহাড় পার হওয়ার সময় হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ইসহাক আলী খান। এরপর সোমবার মেঘালয় রাজ্যের উমকিয়ং থানা-পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ইসহাক আলী খান রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর তিনি ভারতে পালানোর উদ্দেশ্যে সিলেটে যান। শনিবার ভোর চারটার দিকে তিনিসহ কয়েকজন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল এলাকা দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি এলাকায় যান। ভোর ছয়টার দিকে ওই এলাকার একটি পাহাড়ে ওঠেন। পাহাড় পার হয়ে তাঁদের গন্তব্যে যাওয়ার কথা ছিল।
ইসহাক আলী খানের সঙ্গে থাকা চট্টগ্রামের আমিন নামের এক ব্যক্তির বরাত দিয়ে স্বজনেরা জানান, পাহাড়ে ওঠার পর ইসহাক আলী খানের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছিলেন না। সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তি তাঁকে নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে চলার সময় তিনি মারা যান।
তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, বিএসএফের তাড়া খেয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই দিন (শনিবার) সন্ধ্যায় ইসহাক আলী খানের লাশের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা শোক প্রকাশ করেন। ছবিতে দেখা যায়, ইসহাক আলী খানের একটি পায়ের নিচের দিকে রক্ত ঝরছে।
১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি পিরোজপুর-২ (কাউখালী-ভান্ডারিয়া-নেছারাবাদ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। কিন্তু ১৪–দলীয় জোটকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় তাঁকে সরে দাঁড়াতে হয়।