বরিশালে ধারাবাহিক তাপপ্রবাহের মধ্যে গতকাল সোমবারের বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছিল জনমনে। রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় আজ মঙ্গলবার বরিশালের হিজলা ও মুলাদী উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে ভোট শান্তিপূর্ণ হলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। দুই উপজেলার মধ্যে হিজলায় ৩৮ শতাংশ ও মুলাদীতে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আজ দুই উপজেলায় ভোট হয়েছে। এবারের নির্বাচনে দুই উপজেলায় বিএনপির কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন না। চেয়ারম্যান পদে হিজলায় চারজন ও মুলাদীতে দুজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এর আগে ৮ মে প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত সদর উপজেলা নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হিজলা উপজেলাকে ভাগ করেছে মেঘনা নদী। মেঘনার ওপারে তিনটি ইউনিয়ন, বাকি তিনটি সদর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত। নদীর ওপারের হিজলা গৌরব্দি, মেমানিয়া ও ধুলখোলা ইউনিয়নের নদীভাঙন, দারিদ্র্য, অনুন্নয়ন উপজেলাবাসীর যুগ-যুগের অভিশাপ। হিজলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১। এর মধ্যে ৩৮ ভাগ মানুষ আজ ভোট দিয়েছেন।
দুপুর ১২টার দিকে হিজলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুরে আফসার উদ্দীন ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বুথগুলোর সামনে নারী-পুরুষের সারি খুবই ছোট। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় ভোট দিতে কাউকে তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি।
ওই কেন্দ্রের ভোটার সায়েদ আকন (৫০) বলেন, ‘ভোট দিতে আইছি। ভোটার কম হওয়ায় ঝামেলা ছাড়াই ভোট দিছি।’ ভোটার কম কেন, প্রশ্ন করলে বললেন, ‘মাইনসে ক্যান যেন এহন আর ভোট দেওনের আগ্রহ দেখায় না।’ কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁর কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ভোট পড়েছে। কেন্দ্রের মোট ভোটার ৪ হাজার ৩৪৮।
বড়জালিয়া ইউনিয়নের সংহতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও ভোটারদের উপস্থিতি কম দেখা যায়। অল্প যে কয়েকজন ভোটার দেখা যায়, তার অধিকাংশ নারী। গুয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব কোড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিজলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র ঘুরেও উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। বেশ কিছু কেন্দ্রে কিছুক্ষণ পরপর ভোটারদের ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এসব কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন ছিল না।
হরিনাথপুর ইউনিয়নের বোর্ড স্কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরের পর উপস্থিতি কিছুটা বেশি দেখা যায়। ভোট দিতে আসা গৃহবধূ নুসরাত জাহান (৩৫) বলেন, ‘ভোট তো শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু ভোটার কেন জানি কম।’
অন্যদিকে মুলাদী উপজেলায় প্রথম ২ ঘণ্টায় তেমন একটা ভোটার উপস্থিতি লক্ষ করা না গেলেও সকাল ১০টা থেকে উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। মুলাদীতে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টায় ভোট পড়েছিল ৯ শতাংশ। মেঘনা তীরের এই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ২৩ হাজার ২৩৭। সেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোট গ্রহণ শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনদীপ ঘরাই প্রথম আলোকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। হিজলায় ৩৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও মুলাদীতে ৩৪ দশমিক ৯১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখন গণনার কাজ চলছে।