কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়াকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর) সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ এবং সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। শনিবার সকাল থেকে উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে।
রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিল করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান ঢাকায় অবস্থান করলেও তাঁর অনুসারীরা গত বৃহস্পতিবার সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকিরের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন। এদিকে শনিবার সকালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমান সংসদ সদস্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। সকাল থেকে জাকিরের সমর্থকেরা উপজেলা শহরের টিঅ্যান্ডটি মোড়সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসানের সমর্থকেরা উপজেলা পরিষদ-সংলগ্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এতে দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায়। এ সময় শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় পুলিশি টহল জোরদার করে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য (মো. জাকির হোসেন) তাঁর সমর্থকদের নিয়ে এবং বর্তমান সংসদ সদস্যের (বিপ্লব হাসান) সমর্থকেরা একই সময়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিলে উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বেলা ৩টা পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তেজনাকর ছিল। দুই পক্ষের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলা হয়েছে। বেলা ৩টা থেকে পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে আছেন।
এদিকে শনিবার বেলা ১১টার পরে বর্তমান সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসানের অনুসারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রৌমারী ইসলামী ব্যাংকের সামনে দিয়ে গিয়ে উপজেলা চত্বরে পথসভা করে। সেই পথসভায় রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন তাঁর দলীয় ও মন্ত্রিত্বের ক্ষমতা দেখিয়ে লুটপাট, জমি দখল ও নানা দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার কুমির বনে গেছেন। দলের জন্য কিছুই করেননি। বর্তমান অনুমোদনহীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা একজন বই চোর। সরকারি চাকরি করার পরও তিনি কীভাবে দলের একটি ভাইটাল পোস্টে থাকতে পারেন। আমরা এই অবৈধ কমিটির বিলুপ্তি চাই, সেই সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি চাই।’
এদিকে সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যে গ্রুপটি আজ বিশৃঙ্খলা করছে, তারা একসময় আমার কাছ থেকে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। তারা আজ বর্তমান এমপির পক্ষ নিয়ে দলটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানার জন্য সহকারী পুলিশ সুপার (রৌমারী সার্কেল) মমিনুল ইসলাম বলেন, উভয় পক্ষকে বাধা দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যেন কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে। সে বিষয়ে পুলিশ সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।