কক্সবাজারে আজ রোববার সকাল থেকে কড়া রোদ তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। তবে এর মধ্যেই সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের এক কিলোমিটারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে অধিকাংশ মানুষ সমুদ্রের লোনাপানিতে শরীর ভিজিয়ে আনন্দ–উল্লাসে মেতেছেন। কেউ দ্রুতগতির জলযান জেডস্কি নিয়ে ঘুরে আসছেন গভীর সমুদ্রের জলরাশিতে। অনেকে আবার বালুচরে দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন।
সকাল নয়টার দিকে সুগন্ধা পয়েন্টে অন্তত ১০ হাজার পর্যটকের ভিড় দেখা যায়। এ ছাড়া উত্তর পাশে সিগাল, লাবণী পয়েন্ট মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার পর্যটক উপস্থিত হয়েছেন। সমুদ্রে বেড়াতে আসা অধিকাংশ মানুষ লোনাপানিতে নেমে গোসলে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৩৫ হাজার পর্যটক সৈকতে নেমেছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ডের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। সন্ধ্যা নাগাদ সৈকতের কলাতলী থেকে সুগন্ধা-সিগাল হয়ে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে প্রায় এক লাখ মানুষ সমবেত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্ত সৈকতে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকবে।
সকাল থেকে সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতে গোসল শেষে বেশির ভাগ পর্যটক কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ঘুরে আসছেন। এই সড়কের দুপাশে আছে পাহাড়-ঝরনা, প্রাকৃতিক গুহা, দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ি ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী, পাটুয়ারটেক, কানারাজার সুড়ঙ্গ, লবণ উৎপাদন মাঠ, সুপারিবাগান, টেকনাফ সৈকত ইত্যাদি।বেশির ভাগ পর্যটক টমটমে (ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা) ঘোরাঘুরি করছেন। এ ছাড়া অনেকে আবার দ্রুতগতির জলযান স্পিডবোটে ছুটছেন সাগরদ্বীপ মহেশখালী ও সোনাদিয়াতে। সেখানকার মৈনাক পর্বতে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক আদিনাথ মন্দির, পাহাড়ের নিচে রাখাইনপল্লি, বৌদ্ধবিহার, প্যাগোডা ইত্যাদি।
সকালে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সুগন্ধা সৈকতে নামেন ঢাকার ফরাশগঞ্জের ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা (৪৫)। বালুচরে কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুজন নেমে পড়েন সমুদ্রের কোমরসমান পানিতে। গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের অর্ধেক সদস্য ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি বরিশালে চলে গেছেন। তাঁরা দুজন এসেছেন কক্সবাজারে। সমুদ্রসৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে ২৫ এপ্রিল রাতের বাসে তাঁরা ঢাকায় ফিরে যাবেন।
তবে রোদ-গরমের অনেক পর্যটক হাঁসফাঁস করছেন। রোদ থেকে নিস্তার পেতে পর্যটকেরা চেয়ার-ছাতায় (কিটকট) বসে সময় কাটাচ্ছেন। সৈকতের পাঁচ কিলোমিটারে বসানো হয়েছে প্রায় দুই হাজার কিটকট। প্রতি ঘণ্টায় কিটকটের ভাড়া ৩০ টাকা। পর্যটকের মধ্যে অনেকেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে আয়েশি ঢঙে সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অনেকে বিচ বাইকে চড়ে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
এর আগে পুরো রমজান মাসে সৈকত এলাকার অনেক দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে সব দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। আজ বেলা ১১টার দিকে এক হাজারের বেশি দোকানপাট খোলা হয়েছে। সেখানে বেচাবিক্রিও জমে উঠছে।
ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, এবারের ঈদের ছুটিসহ টানা ১০ দিনে ৮ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল গেস্টহাউস, রিসোর্ট ও কটেজের ৭৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। কক্ষভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। হোটেলগুলোয় দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৬০ হাজার। তবে পর্যটকের চাপ বেড়ে গেলে সে ক্ষেত্রে হোটেলকক্ষে গাদাগাদি করে রাখতে হয়।
শহরের রেস্তোরাঁ রয়েছে সাত শতাধিক। ইতিমধ্যে তিন শতাধিক রেস্তোরাঁ খুলেছে। তবে মূল্যতালিকা দেখে খাবারের অর্ডার দিতে পরামর্শ দিলেন কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হলে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের একাধিক তথ্য ও অভিযোগকেন্দ্রে রয়েছে। সেখানে নালিশ করা যেতে পারে। তখন অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমুদ্রসৈকত, সুগন্ধা ও কলাতলী সড়কের দুপাশে বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান আছে। এসব দোকানে নিষিদ্ধ ও খাবার অনুপযোগী পোড়া তেলে ভাজা খাবার বেচাকেনা। এ ক্ষেত্রে পর্যটকদের সতর্ক থাকতে হবে।
সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে কয়েক দিনে অন্তত আট লাখ পর্যটক সৈকত ভ্রমণে আসছেন। তাঁদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, বিনোদনকেন্দ্র ছাড়াও সমুদ্রসৈকতে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।