হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কর্মীর পাশে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক। গতকাল সোমবার রাতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত কর্মীর পাশে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক। গতকাল সোমবার রাতে নওগাঁ সদর হাসপাতালে

নওগাঁ-৬

সস্ত্রীক অবরুদ্ধ ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, এক দিনে চারবার হামলা

নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুকের (সুমন) নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রানীনগর উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল এলাকা, কাশিমপুর ও জিয়ানীপাড়া এলাকায় এসব হামলার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের অনুসারীরা হামলাগুলো করেছেন বলে অভিযোগ ওমর ফারুকের। এসব ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন দুই প্রার্থী।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। আর আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ আসনে মোট পাঁচ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গতকাল স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হওয়া চার দফা হামলায় ছয়জন আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন রানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন (৫০), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মালেক (৩১), রবিউল ইসলাম (৩৩), কাশিমপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মণ্ডল (৪৭), আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন (৪৫) ও মাহাবুর হোসেন (৪৫)। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত আনোয়ার হোসেন, আবদুল মালেক ও মাহাবুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যরা রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুকের স্ত্রী কুরাতুল আইন তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ট্রাক প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। কাশিমপুর ইউনিয়নের চারাপাড়া গ্রামে প্রচারণা চালানোর সময় নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাহিদ ও তাঁর অনুসারী জনির নেতৃত্বে ৩০-৪০ ব্যক্তি কুরাতুল আইন ও কর্মী-সমর্থকদের ঘেরাও করে ফেলেন। খবর পেয়ে স্ত্রী ও কর্মী-সমর্থকদের উদ্ধার করতে ওমর ফারুক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সেখানে যান। এ সময় নৌকার প্রার্থীর অনুসারী নেতা-কর্মীরা লাঠি ও লোহার রড দিয়ে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। তখন তাঁদের ওপর আঘাত ঠেকাতে কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের চারপাশে বলয় তৈরি করেন। আঘাত ঠেকাতে গিয়ে ওমর ফারুকের কর্মী মাহবুর, মোশাররফ ও ফারুক আহত হন।

কাশিমপুরের ওই ঘটনার জেরে রানীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী ও উপজেলা সদরে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুকের সমর্থক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন। সেখানে নৌকার প্রার্থীর অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর। আনোয়ারকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সেখানেও নৌকা প্রার্থীর অনুসারীরা আবার তাঁদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় থানা-পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় কাশিমপুরের চারাপাড়া এলাকায় আমার স্ত্রী ও কর্মী-সমর্থকদের আটকে রাখার খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করতে সেখানে গেলে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকেরা আমাদের ওপর হামলা করে। অন্যদিকে উপজেলা বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন স্থানে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান করার সময় আনোয়ার হোসেনকে রড ও লাঠি দিয়ে মারপিট করে নৌকার লোকজন। এতে তাঁর তিনটি দাঁত ও এক পা ভেঙে গেছে। এ ছাড়া গতকাল রাত আটটার দিকে উপজেলার জিয়ানীপাড়া এলাকায় আবদুল মালেক নামের আমার আরেক কর্মীকে মারধর করে নৌকার প্রার্থীর অনুসারীরা।’

হামলার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকেরা ট্রাকের কর্মী-সমর্থকদের ওপর কোনো হামলা করেনি। বরং তারাই কাশিমপুর এলাকায় আমার কর্মী-সমর্থকদের মারপিট করে আহত করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে।’

রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ জানান, সোমবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারামারির ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় মামলা করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।