চৌরাস্তার মোড়ে ছোট চায়ের দোকানে বসে চার-পাঁচজন স্থানীয় বাসিন্দার আড্ডা দিচ্ছিলেন। চা খেতে খেতে সেই আড্ডায় উঠে আসে রোজার মাসের নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতির আলাপ। চা এগিয়ে দিতে এসে দোকানি মো. তাজউদ্দীন বলে গেলেন, ‘এই যে রোজা আইতাছে, আমরা কী জিনিসপত্র কিইনা খাইতে পারুম? সবকিছুর যে দাম বাড়ছে!’
গাজীপুরের শ্রীপুরের গোসিংগা ইউনিয়নের হায়াতখারচালা চৌরাস্তায় ৫৫ বছর বয়সী তাজউদ্দীন পাঁচ বছর ধরে চায়ের দোকান চালান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এখানে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে তাজউদ্দীনের নানা প্রশ্ন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘দেশের খবর কী? আপনাগোর কাছে তো আসল খবরটা আছে। আসল খবরটা কইয়া যান। রমজানে জিনিসের দাম আরও বাড়বে কি? রমজানে জিনিসের দাম বাড়লে ক্যামনে চলমু।’
তাঁর এমন প্রশ্নের সঙ্গে চায়ের দোকানে বসে থাকা অন্যরাও নিত্যপণ্যের দামের বিষয়ে নানা আলাপ শুরু করে দিলেন। তাজউদ্দীন দুই সন্তানের জনক। চা–দোকানের আয় দিয়ে তিন-চার বছর আগে ভালোই চলতে পারছিলেন। এখন আর চলতে পাচ্ছেন না বলে জানালেন তিনি। তাজউদ্দীন বলেন, ‘চা তো হেই ৫ টাকা কাপই বেচি। ওই দিক দিয়া তেল, চাল, ডাল, মাংস, ডিম—সবকিছুর দাম বাইড়া গেছে। চলার তো কোনো উপায় দেখতাছি না।’
তাজউদ্দীনের আশঙ্কা, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে তাঁর চার সদস্যের পরিবার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর চিনির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানের জন্য গত কয়েক মাস আগে যে পোলট্রি মুরগি কিনেছিলেন ১৫০ টাকা কেজি, সেটি এখন ২৭০ টাকা। প্রতি কেজি চাল কিনতে খরচ হয় অন্তত ৬০ টাকা। চা তৈরিতে জ্বালানি কাঠ কিনতে হয় দ্বিগুণ দাম দিয়ে।
তাজউদ্দীন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস ধরে তিনি গরুর মাংস কিনতে পাচ্ছেন না। বর্তমানে তাঁর এলাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন। মাসে যা আয় হয়, তার পুরোটাই চলে যায় সংসার খরচে। হঠাৎ জরুরি প্রয়োজনে টাকার দরকার হলে ধারদেনা ছাড়া উপায় নেই।
তাজউদ্দীনের চায়ের দোকানের ক্রেতা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ব্রয়লার মুরগি ছিল মানুষের শেষ ভরসা। অল্প টাকায় মাংসের চাহিদা মেটানো যেত। অথচ সেই মাংসের দাম আকাশছোঁয়া।
দোকানে বসে থাকা জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন বললেন, রোজার মাসে যদি জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়ে, তাহলে দেশের মানুষ কীভাবে চলবে? তাঁর ধারণা, যাঁরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছেন, তাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন না।
চা–দোকানি তাজউদ্দীন অতিরিক্ত আয়ের জন্য দোকানে বিভিন্ন জাতের কাঁচা ও পাকা কলা খুচরা বিক্রি করেন। এক ক্রেতার কাছে তিনি ছোট আকারের চাঁপা কলার দাম চেয়েছেন ২০ টাকা প্রতি হালি। ক্রেতা তা ১৫ টাকায় কিনতে দর-কষাকষি করছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন বাজার পরিস্থিতি কথা জানিয়ে দাম কমালেন না। বাধ্য হয়ে ওই ক্রেতা তিন হালির পরিবর্তে দুই হালি কলা কিনে বাড়ি ফেরেন। এ বিষয়ে তাজউদ্দীন বলেন, ‘কয়দিন আগেও ১০ টাকায় বিক্রি করছি। অহন ১৫ থেকে ১৬ টাকা হালি দরে কিনে আনতে হয়। কয়েকটা টাকা লাভ না করলে কেমনে চলমু।’