ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বরসহ ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. সাহিদুজ্জামান, গট্টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ভাই মো. আবুল প্রমুখ।
এর আগে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আলী শেখ (৫০) বাদী হয়ে ওয়াদুদ মাতুব্বরসহ ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে সালথা থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০ জনকে দ্রুত বিচার আইনে এবং ১৪ জনকে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘১৪ এপ্রিল (গতকাল) বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওয়াদুদ মাতুব্বর ও হাবিবুর রহমানের (গট্টি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) উসকানিতে অন্য আসামিরা লোহার রড, বাঁশের লাঠি, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সালথা কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে আমার বসতবাড়ির সামনে জড়ো হয় এবং শক্তির মহড়া প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আসামিরা আমার বসতঘরের ভেতর প্রবেশ করে আসবাব, খাট, ফ্রিজ, শোকেস, ড্রেসিং টেবিল, সাব-বাক্স ও জিনিস ভাঙচুর করে।’
মামলার বাদী সৈয়দ আলী নিজেকে গৃহস্থ দাবি করে বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিতে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরীর সমর্থক। ঈদের পরদিন ক্যারম খেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মণদিয়া গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় জুগিডাঙ্গা ও কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের যুবকদের। ওই রাতেই প্রতিপক্ষের হামলায় জুগিডাঙ্গা গ্রামের তিনজন আহত হন। পরে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর জেরে গতকাল বিকেলে জুগিডাঙ্গা ও কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামে দ্বিতীয় দফায় হামলা করা হয়। পরে পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর ও তিনটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় চারটি গরু, পেঁয়াজসহ বাড়ি থেকে মালামাল লুট করা হয়।’
ওয়াদুদ মাতুব্বরকে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ফরিদপুর শহরে তাঁর ঝিলটুলির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাসহ মারপিট ও হামলার ঘটনায় অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া দুদকে তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগে তদন্ত চলমান।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফায়েজুর রহমান জানান, দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলায় ওয়াদুদ মাতুব্বরসহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পরে তাঁদের রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। অন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে আগে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। ওই সব মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।