বরিশালে ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করতে বিএনপির লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পুলিশ লাঠিপেটা করে পণ্ড করে দিয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল-সংলগ্ন বিএনপি কার্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বেশ কয়েক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানসহ আট নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
ঘটনার পর বরিশাল নগরের সদর রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহলের পাশাপাশি চলছে তল্লাশি অভিযান।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বেলা ১১টায় নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল-সংলগ্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা শুরু করেন। এতে নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বেলা ১১টায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য লিফলেট বিতরণের জন্য অশ্বিনী কুমার হলের সামনে আসেন। এ সময় সেখানে পুলিশের সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ প্রথমে তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই নেতা-কর্মীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লে পুরো সদর রোডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিএনপির কয়েকজন রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলে পুলিশ তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। একই সময়ে সেখান থেকে ধাওয়া করে পুলিশ আবুল হোসেন খানকেও আটক করে।
বিএনপির সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান এবং কর্মী আমিনুর রহমান, রিয়াজ হোসেন, সুজন আকন, সাইফুল ইসলাম, আল আমিন, হৃদয় হোসেন ও তামিমকে আটক করে নিয়ে গেছে।
বরিশাল নগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নির্দয়ভাবে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ। নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে আটক করে নিয়ে গেছে।’
আলী হায়দার আরও বলেন, এই অবৈধ সরকার এখন বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকেও ভয় পায়। গণতন্ত্র হত্যা করে সরকার একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করে যে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, সেটার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে এ ভয়। কিন্তু বিএনপির এই একদফার আন্দোলন দমন করা যাবে না। তিনি অবিলম্বে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপকমিশনার দক্ষিণ আলী আসরাফ ভূঞা বলেন, পূর্বঘোষণা ছাড়াই বিএনপির একদল নেতা-কর্মী ব্যস্ততম সড়ক আটকে দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় তাঁদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলা হলে তাঁরা পুলিশের কাজে বাধা দেন। এ সময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খানসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। নগরের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।