বর্গাচাষি সুলতান উদ্দিনের (৫৬) সাতজনের সংসার। ব্যাগ নিয়ে সবজির বাজারে ঘুরছিলেন। বাড়ি থেকে বেগুন নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু বাজারে এসে দেখেন বেগুনের কেজি ১২০ টাকা। অগত্যা বেগুন না কিনে পেঁপে কিনতে যান। বাজারের সবচেয়ে কম দামি এই সবজির কেজিও ৪০ টাকা। অনেক দরদাম করে ৩০ টাকায় কেনেন তিনি।
সুলতান উদ্দিনের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরের দীঘারকান্দা গ্রামে। নগরের পাইকারি সবজির বাজার মেছুয়া বাজারে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘বেগুন কিনবার আইছিলাম, যাইতাছি পাবদা (পেঁপে) লইয়া। এক কেজি বেগুন কিনার সাহস পাইলাম না। এমন অবস্থা হইছে, বেগ ভইরা টেহা আইনা পকেট ভইরা বাজার নিতে অইব। অথচ আগে ১০০ টেহার সবজি কিনলে বেগ ভইরা বাড়িত যাইতাম।’
সবজি বিক্রেতা সবুজ মিয়া (৩২) প্রথম আলোকে বলেন, অতিবৃষ্টি ও যেসব এলাকায় সবজি হয়, সেখানে বন্যা হওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। বন্যার কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি, অন্য কোনো কারসাজি নেই। তিনি বলেন, ‘পেঁপে ছাড়া ১০০ টেহার নিচে কোনো সবজি নাই বর্তমান বাজারে।’
চর ঈশ্বরদীয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ১৬ বছর ধরে মেছুয়া বাজারে সবজি বিক্রি করেন। সবজির দাম বাড়তি প্রসঙ্গে বলেন, ভারতের মরিচ আসে না বলে মরিচের দাম বেড়েছে। শেরপুর ও ময়মনসিংহ সীমান্তের উপজেলাগুলোতে বন্যার কারণে সবজি নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টিতে অন্যান্য এলাকার সবজিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য গত এক সপ্তাহে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সবজি বিক্রেতা ইমরান হোসেনও (৬৫) একই কারণের কথা জানালেন।
সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার সময় এক ক্রেতা বলে উঠলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম, আমরা তো বিপদে পড়ছি, খাওন তো লাগব। দাম বাড়লেও কিছু করার নাই।’
নগরের মেছুয়া বাজার, সানকিপাড়া রেলক্রসিং বাজার, চরপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগের ১৮০–২০০ টাকার কাঁচামরিচ আজ শনিবার ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০০ টাকার সবুজ ক্যাপসিকাম ৫০০, ৫০০ টাকার রঙিন ক্যাপসিকাম ৮০০, ৭০–৮০ টাকার বরবটি ১২০ থেকে ১৩০, ৫০–৬০ টাকার করলা ১০০ থেকে ১২০, ৩০-৪০ টাকার পটোল ৮০ থেকে ১০০, ৪০-৫০ টাকার শসা ৬০ থেকে ৭০, ৫০-৬০ টাকার চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও ঝিঙে ৮০ থেকে ১০০, ৬০ টাকার লম্বা বেগুন ১০০, ১০০ টাকার গোল বেগুন ১৬০, ২০০-২২০ টাকার টমেটো ২৪০ থেকে ২৮০, ১২০ টাকার গাজর ১৬০, ৪০-৫০ টাকার লাউ ৮০ থেকে ১০০, ৩০ টাকার পুঁইশাক ৪০, ২৫ টাকার পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে ধনেপাতা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কমেছে। এক সপ্তাহ আগের ৫০০ টাকা কেজির ধনেপাতা প্রকারভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ১৪০ টাকার ফুলকপি প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫০ টাকা কেজির বাঁধাকপি একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
সানকিপাড়া রেলক্রসিং বাজারের ব্যবসায়ী রাকিব মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে গত সাত দিনে সব সবজির দাম বেড়েছে। তাঁরা বেশি দামে কেনায় বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বেশি দাম দেখে ক্রেতারা অনেক সময় রেগে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কিছুই করার থাকছে না।
জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আবদুস ছালাম প্রথম আলোতে বলেন, ‘আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে। সবজির দাম নির্ধারিত নয়। সবজির বাজার ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভর করে। তারপরও আমার ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ভাউচার চেক করছি। অসংগতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ময়মনসিংহের জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মৌটুসী সাহা প্রথম আলোকে বলেন, যতটুকু জেনেছেন, বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়েছে। সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তাঁরা নিয়মিত বাজারে নজরদারি করছেন। গত কয়েক দিন সবাই ছুটিতে থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি বলা যাচ্ছে না। তাঁদের টাস্কফোর্স আছে। প্রতি মাসে একবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করা হয়। আগামী সোমবার থেকে তাঁরা মাঠে নামবেন।