জয়পুরহাটে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুরের সময় পুলিশের ‘নীরব ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন

জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষের সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। মঙ্গলবার বিকেলে শহরের রেলগেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জয়পুরহাট জেলা শহরে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষের পর পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয় ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এ সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে দুই দিকে হামলা চালিয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষের সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওই সময় বিএনপি কার্যালয়ের প্রায় ১০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেলে আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা কেউ ভাঙচুরের বাধা দেননি। ভিডিওতে তার প্রমাণ রয়েছে। আমাদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করল, আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের আহত করল, অথচ আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে উল্টো পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতা মামলা করল।’

তবে বিএনপি নেতাদের এমন দাবি মানতে নারাজ জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পুলিশই ঠেকাইছে। যদি পুলিশ না থাকত, তাহলে বিএনপির কার্যালয় থাকত না। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ সঠিক নয়।’

গত মঙ্গলবার বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত জেলায় জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। সকালে জেলা বিএনপির ফয়সাল আলিম-গোলাম মোস্তফা গ্রুপ দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। এরপর বিকেল ৪টায় শহরের নতুন হাট থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু হয়। সেখান থেকে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী হাজী বদরুদ্দীন সড়ক হয়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে জড়ো হন।

উভয় দলের কয়েক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শান্তি মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন। এরপর দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই দলের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আসবাব ও জানালা ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় দলের প্রায় ৩০ জন আহত হন। এ সময় পুলিশ পাঁচটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ওই দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী জয়পুরহাট সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল হোসেন। অন্যটির বাদী জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হোসেন। দুটি মামলায় মোট এজাহারনামীয় আসামি ১৯৮ জন। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ১ হাজার জন। দুটি মামলাতেই আসামির তালিকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবাদুর রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনসহ জেলা ও উপজেলা নেতাদের নাম রয়েছে।

মামলার পর থেকে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেপ্তারের ভয়ে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী অনেকটা ঘরছাড়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলা দুটিতে আসামির তালিকায় জেলা বিএনপির ফয়সাল আলিম-মোস্তফা গ্রুপের কারও নাম নেই। তবে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রাখায় ওই গ্রুপের নেতা-কর্মীরাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন।

বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, মামলার পর থেকে পুলিশ তাঁদের একাধিক নেতাকে ধরপাকড়ের চেষ্টা করেছে। নেতা-কর্মীরা বাইরে থাকায় তাঁদের ধরতে পারেনি পুলিশ। দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন। এ কারণে তাঁরা সবাই পুলিশি হয়রানির আশঙ্কা করছেন। দিনের আলোতে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করল, অথচ উল্টো পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এতে শুধু আসামি বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

সদর থানা-পুলিশ জানায়, দুটি মামলার পর এখন পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার পরদিন, গত বুধবার দুজন ও গতকাল বৃহস্পতিবার একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন আবু হেনা মোফাখারুল ইসলাম (৩০), নুর মোহাম্মদ সরদার (৪৪) ও বকুল হোসেন (৩৮)। এর মধ্যে গতকাল দুপুরে বকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দোগাছি ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর নাম দুটি মামলার এজাহারে নেই। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিন আসামিকেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওসি হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা মামলায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন এজাহারনামীয় এবং একজন অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছেন। এখন আসামিদের কাউকে এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।