শেরপুরের নকলায় তথ্য না দিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিকের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করেছে তথ্য কমিশন। আজ রোববার সকালে তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন।
এদিকে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে আজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এ–সংক্রান্ত নথির নকল চেয়ে আবেদন করেছে ওই সাংবাদিকেরা পরিবার।
দণ্ড পাওয়া ওই সাংবাদিকের নাম শফিউজ্জামান রানা। তিনি দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার নকলা সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। গত মঙ্গলবার তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তথ্য অধিকার আইনে একটি প্রকল্পের তথ্য চান। কিন্তু তথ্য চাইতে যাওয়া ওই সাংবাদিককে অসদাচরণের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযোগ ওঠে, তথ্য চাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য তথ্য কমিশনার শহীদুল আলমকে (ঝিনুক) দায়িত্ব দেয় কমিশন। তিনি কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম আজ সকাল সাড়ে ১০টায় শেরপুর কারাগারে যান। কারাবিধি অনুযায়ী তিনি সাংবাদিক শফিউজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁর বক্তব্য সংরক্ষণ করেন। দুপুরে তথ্য কমিশনার নকলা পৌর শহরের কুরশা বাদাগৈড় এলাকায় ওই সাংবাদিকের বাসায় যান। সাংবাদিকের স্ত্রী বন্যা আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বন্যার কাছ থেকে তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকের আবেদনের দুটি কাগজ সংগ্রহ করেন। পরে বিকেলে তথ্য কমিশনার নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের সঙ্গে রানার আবেদনের বিষয়ে কথা বলেন ও সাজার নথি দেখেন।
তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের নির্দেশনামতো সাংবাদিক শফিউজ্জামানের পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে তিনি শেরপুরে এসেছেন। এর অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং তথ্য সংগ্রহ করছেন। অনুসন্ধান শেষে দ্রুতই কমিশনে সিদ্ধান্ত কার্যপত্র দাখিল করবেন। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি বিচারাধীন। এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন না।
এদিকে সাংবাদিক শফিউজ্জামানের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে আজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সাজার নকল চেয়ে আবেদন করেছে তাঁর পরিবার। নকল পেলে কাল সোমবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আধার।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল খায়রুম সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সাংবাদিক শফিউজ্জামানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজার বিষয়ে আপিল করলে, আদালতের কার্যক্রমে (প্রসিডিউর) কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকলে আইনানুযায়ী বিবেচনা করা হবে।
সাংবাদিক শফিউজ্জামানের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দোষ স্বীকার না করলেও শফিউজ্জামানকে সাজা দেওয়া হয়েছে। শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম কে মুরাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে কোনো আসামি দোষ স্বীকার না করলে তাঁকে সাজা দেওয়া আইনসম্মত নয়। সাংবাদিক রানার ক্ষেত্রে এমনটি হলে সেটি ‘প্রসিডিউরাল ডিফেক্ট’ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই আপিলে ‘বেনিফিট’ পাবেন।