জামায়াতের ৬ নেতা-কর্মী কাউন্সিলর পদে জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ আসনে চারজন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে দুজন।
সিলেট সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৪২ জনকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিএনপি। অন্যদিকে বহিষ্কৃত প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণাতেও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশে পাননি। নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে এত কঠোরতা দেখানোর পরও বিএনপির বহিষ্কৃত ৯ জন নেতা কাউন্সিলর পদে জয় পেয়েছেন। এর বাইরে জামায়াতপন্থী ছয়জন নেতা-কর্মীও কাউন্সিলর পদে জয় পান।
বিএনপির কঠোর অবস্থানের পরও দলটির বহিষ্কৃত ৯ জন নেতার জয় পাওয়ার বিষয়টিই এখন সিলেটের রাজনৈতিক মহলে বেশি আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যাঁরা জয় পেয়েছেন, ওয়ার্ডে তাঁদের একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। তাই দল–মতনির্বিশেষে তাঁরা ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে পরিচিত থাকায় সরকারবিরোধী ভোটও এসব প্রার্থী পেয়েছেন। এ দুটি বিষয়ই তাঁদের জয়ের মূল কারণ।
গত বুধবার ঘোষিত ফলাফল ঘেঁটে দেখা গেছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয়বারের মতো জয় পেয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ তৌফিকুল হাদী। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে টানা পাঁচবারের মতো জয় পান মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ চৌধুরী। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পান বর্তমান কাউন্সিলর মো. নজরুল ইসলাম। তিনি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পান বর্তমান কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান। তিনি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মো. আবদুর রকিব। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন হুমায়ুন কবির। তিনি ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন।
৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পান জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন। এ ছাড়া ৪ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নির্বাচিত হন মহানগর মহিলা দলের সহসভাপতি রুহেনা বেগম।
বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। কাউন্সিলর পদে সব সময়ই হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এবার তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় সরব ছিলেন। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও যেন দলের কেউ অংশ না নেন, এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপরও তা উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় ৪২ জন নেতাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
মহানগর বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কঠোর অবস্থানের কারণে বহিষ্কৃত নেতাদের নির্বাচনী প্রচারণায় দলের কেউই সেভাবে অংশ নেননি। আড়ালে যদি দলের কোনো নেতা-কর্মী বহিষ্কৃত এই নেতাদের সমর্থন দেন, সেটা বিএনপির জানা নেই। তবে দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও এসব নেতার জয় পাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষের সরকারবিরোধী মনোভাবের বিষয়টিই প্রমাণ করে।
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পাওয়া জেলা ছাত্রদলের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ভোটাররা যেভাবে আমার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছেন, এ জন্য তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যদিও এলাকার সাধারণ মানুষের চাপে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, তবে দলের নির্দেশনা অমান্য করাটা আমার ঠিক হয়নি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করছি, দল আমাকে পুনরায় ফিরিয়ে নেবে। বিএনপি আমার পরিবার। নিশ্চয়ই পরিবার আমাকে গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে দলের নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, দেশের জনগণের ভোটের অধিকার আদায়সহ বৃহৎ স্বার্থে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাচ্ছে না। তাই যে নির্বাচন হয়েছে, সেটাকে তাঁরা মানেন না। এ নির্বাচনে কে জিতল আর কে হারল, এটা বিষয় নয়। যেসব নেতা দলের নির্দেশনা অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল তাঁদের আর গ্রহণ করবে না।
এদিকে জামায়াতের ছয়জন নেতা-কর্মী সিলেটে কাউন্সিলর পদে জয় পেয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ আসনে চারজন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে দুজন। জামায়াতের দুই নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জয় পাওয়া ৬ জন হলেন সাধারণ আসনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আবদুল জলিল ও ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে রিয়াজ মিয়া। সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মোছা. রেবেকা বেগম ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ছামিরুন নেছা।
মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী বলেন, জামায়াত বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছে না। যাঁরা সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, এটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে দলের পক্ষ হতে তাঁদের কোনো মন্তব্য নেই।
সিলেটে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৫৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।