কাকডাকা ভোর। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গদখালী ফুলের বাজার। সাইকেল-ভ্যানে বাহারি ফুল নিয়ে বাজারে আসছেন চাষিরা। তাঁদের কারও কাছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা; কারও কাছে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বাহারি সব ফুল। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা সেই ফুল কিনছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত চলে জমজমাট কেনাবেচা। প্যাকেজিং শেষে বাস-ট্রাকে সেই ফুল যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে। সাধারণত এখানে সকাল ৯টার মধ্যে বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ফুলের সরবরাহ বেশি থাকায় বেলা ১১টা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে।
ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও সরস্বতীপূজা সামনে রেখে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের বেচাবিক্রি বাড়ে। এর মধ্যে গত রোববার সবচেয়ে বেশি বেচাবিক্রি হয়। ওই দিন পাইকারিতে একটি গোলাপ ২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
গতকাল সোমবার থেকে গোলাপসহ সব ধরনের ফুলের দাম কমতে শুরু করে। আজও দাম কমেছে। এরপরও গতবারের তুলনায় দাম তেমন কমেনি। রোববার থেকে আজ পর্যন্ত তিন দিনে পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গোলাপ বিক্রি হয়েছে পৌনে তিন কোটি টাকার।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও পূজা ঘিরে ৮ তারিখ থেকে বেচাবিক্রি বাড়ে। এর মধ্যে রোববার বেশি বেচাকেনা হয়। গত তিন দিনে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে। এর মধ্যে গোলাপ পৌনে তিন কোটি, গ্লাডিওলাস এক কোটি, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও কামিনীপাতা মিলিয়ে এক কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গদখালী পাইকারি ফুলের বাজারে আজ গোলাপ ১০ থেকে ১৫, জারবেরা ১৪ থেকে ১৬, রজনীগন্ধা ১১ থেকে ১২, গাঁদা প্রতি হাজার ৬০০ থেকে ৮০০, জিপসি ও কামিনীপাতা প্রতি মুঠো ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে পাইকারি বেচাকেনা হয়েছে। ফুলের ব্যাপারী মোরশেদ হোসেন বলেন, আজ বিভিন্ন ধরনের দেড় লাখ টাকার ফুল কিনে বাসের ছাদে করে গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও নাটোরে পাঠিয়েছেন।
সকাল ছয়টায় ৬০০ গোলাপ নিয়ে গদখালী পাইকারি ফুল বাজারে আসেন ফুলচাষি আনারুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ৫০০ গোলাপ গড়ে ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বাকি ১০০ গোলাপের একটি আঁটি বিক্রির আশায় অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
আনারুল ইসলাম বলেন, গতবারের তুলনায় এবার গোলাপের দাম কম নয়। দুই দিন আগে প্রতিটি গোলাপ ২৫ টাকা দরেও বিক্রি করেছেন। চাষিদের জন্য যা বোনাসের মতো ছিল। এরপর দুই দিন ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে গেলেও সামগ্রিকভাবে কৃষকেরা খুশি। দাম পড়তির দিকে না গেলেও চাষিরা আরও লাভবান হতেন।
ফুল বিপণন সমিতির নেতা আবদুর রহিম বলেন, অনেকে ঋণপত্র খুলে ও চোরাই পথে ভারত থেকে গোলাপ এনেছেন। এতে হঠাৎ গোলাপসহ সব ফুলের দাম কমেছে। যেখানে রোববার ২৫ টাকা দরে গোলাপ বিক্রি হয়েছে। আজ সেখানে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ভারত থেকে ফুল আমদানি না করলে চাষিরা আরও লাভবান হতেন।
দুই দিন ধরে গোলাপের দাম কমলেও গত বছরের তুলনায় কমেনি, বরং বেড়েছে বলে মনে করেন সৈয়দপাড়া গ্রামের গোলাপচাষি রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘দাম কমে গেলেও লোকসান হয়নি। এতে আমরা খুশি। ভারত থেকে ফুল আমদানি না হলে আরও ভালো দাম পেতাম।’