ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটায় মাটি নেওয়ায় পাকা সড়কে জমেছে মাটির স্তর। যানবাহনের চাকার আঘাতে বাতাসে উড়ছে। গত রোববার সিরাজদিখান উপজেলার খিদিরপুরে
ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটায় মাটি নেওয়ায় পাকা সড়কে জমেছে মাটির স্তর। যানবাহনের চাকার আঘাতে বাতাসে উড়ছে। গত রোববার সিরাজদিখান উপজেলার খিদিরপুরে

কৃষিজমির মাটি ইটভাটায়, সড়কে ধুলার আস্তর

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় দিন-রাতে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। অর্থের বিনিময়ে অথবা হুমকি দিয়ে জমির মালিকদের কাছে থেকে এসব মাটি নেওয়া হচ্ছে। গভীর করে মাটি কাটায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ছে পাশের ফসলি জমিও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাসাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের দুই ছেলে, জামাতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকটি চক্র লতব্দি, বাসাইল, কেয়াইন ও চিত্রকোট এলাকার ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে বাসাইল ইউপির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘জমির মাটি মাগনা কাটে না, টাকা দিয়ে কাটে’ বলে সংযোগ কেটে দেন। কয়েক মিনিট পর বাসাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে আবুল হাসেম নামের এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন, ভূমি কার্যালয় ও থানা–পুলিশকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটা হচ্ছে। নিউজ করে পারলে কিছু করেন...।’

গত রোববার দুপুরে বাসাইল ইউনিয়নের খিদিরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল সড়ক থেকে অন্তত দেড় কিলোমিটার ভেতরের জমি থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। দীর্ঘ সারি ধরে ১৫-২০টি ট্রাক এক এক করে এসব মাটি নিয়ে সড়কপথ ধরে ইটভাটার দিকে যাচ্ছে। মাটি কাটার স্থানের তিন দিকেই আলুখেত। পাশের জমিতে মাটি কাটার ফলে আলুখেতে ফাটল ধরেছে।

মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত বাদশা মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলামের ছেলে রুবেলের নেতৃত্বে মাটি কাটা হচ্ছে। জমির মাটি ফুট হিসেবে মালিকদের কাছ থেকে কিনে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রুবেলের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি মাটি কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘জোর করে কৃষিজমির মাটি লুট করছে ভূমিদস্যুরা। প্রভাব খাটিয়ে প্রথমে একজনের জমির মাটি কেনে। ওই জমি থেকে এমন গভীরভাবে মাটি কাটা হয়, যাতে পাশের জমিগুলো ভেঙে পড়ে। এতে বাধ্য হয়ে আমরা পাশের মালিকেরাও মাটি বিক্রি করছি।’

রামকৃষ্ণদি এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা জানান, চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের স্বজনেরা ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

ধুলায় অতিষ্ঠ জনজীবন

বাসাইলের খিদিরপুর থেকে রামকৃষ্ণদি হয়ে পাথরঘাটা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পাকা সড়ক ধুলামাটিতে ঢেকে গেছে। ড্রাম্প ট্রাকে করে ইটভাটায় মাটি নেওয়ার সময় ট্রাক থেকে পড়ে সড়কে মাটির স্তর জমেছে। গাড়ির চাকার ঘষায় মাটি শুকিয়ে ধুলায় পরিণত হয়েছে। সামান্য বাতাসে বা যানবাহন গেলেই ধুলাবালু উড়ে সড়ক অন্ধকার হয়ে যায়। এতে সড়কপথে যাতায়াতকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

শনিবার খিদিপুর সড়ক দিয়ে নাক-মুখ চেপে সিরাজদিখান শহরের দিকে যাচ্ছিলেন নাজির হোসেন নামের এক পথচারী। তিনি বলেন, পায়ের নিচে পাউডারের মতো মাটি। হাঁটা যাচ্ছে না।

অবৈধভাবে মাটি ভরাট এবং ফসলি জমির মাটি কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলমান জানিয়ে সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানে গেলে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। ইউপি চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, যাঁরা মাটি কাটা, ড্রাম্প ট্রাক ও ইটভাটায় মাটি সরবরাহের ব্যবসা করেন, তাঁদের সবাই অনেক প্রভাবশালী। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। প্রতিবাদ করলেই মার খেতে হয়। এ কাজে কারা জড়িত, প্রশাসন তা জানে। অজানা কারণে তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয় না।