কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাঘাইরামপুর-দুইখারকান্দি গ্রামের মাঝামাঝি ডুবন্ত সড়কে বন্যার স্রোতের পানিতে ডুবে নিহত সামিয়া ও আয়েশার বই–খাতা, খেলনাসামগ্রী, সাজুনি, মেহেদী, চিরুনি এখন কেবলই স্মৃতি।
গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় বাঘাইরামপুর-দুইখারকান্দি গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে চাচাতো দুই বোনের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া দুই শিশুর নাম সামিয়া (১০) ও আয়েশা (৮)। আয়েশা উপজেলার বাঘাইরামপুর গ্রামের মনির হোসেনের মেয়ে এবং সামিয়া একই গ্রামের মুক্তার হোসেনের মেয়ে। তারা উপজেলার নয়াকান্দি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে ডুবন্ত সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে তারা ভেসে যায়।
আজ সোমবার দুপুরে সামিয়াদের বাড়িতে প্রবেশ করতেই উচ্চ শব্দে কান্না শোনা যায়। চৌচালা বসতঘরে ঢুকতেই দেখা যায়, সামিয়ার মা সুমা আক্তার বসতঘরের এক কোণে বসে কান্না করছেন। পাশে সুমা আক্তারের স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই কান্না থামছিল না সুমার।
বিলাপ করতে করতে সুমা বলেন, সামিয়া দুই হাতে নিয়মিত মেহেদী পরত, বই পড়ত, সেজেগুজে থাকত। স্কুলব্যাগ, বই-খাতাসহ নিজের সবকিছু নিজেই গুছিয়ে রাখত। কাউকে তার স্কুলব্যাগ ধরতে দিত না। এখন সবই স্মৃতি।
পাশের ঘরেই আয়েশার শোকে কাঁদছিলেন তার মা রাবেয়া আক্তার। বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘আমার আয়েশাকে আমার বুকে এনে দাও। আমার আয়েশাকে ছাড়া আমি বাঁচব না? ওর একমাত্র ছোট ভাই আর একমাত্র ছোট বোনকে কে রাখবে, কার সঙ্গে খেলাধুলা করবে। আয়েশা কবরে একা থাকতে ভয় পাবে, রাতে মাকে ছাড়া একা একা কখনো ঘুমায়নি?’
বাড়ির প্রবেশপথে একটি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছিলেন নিহত আয়েশার নানি জান্নাত বেগম। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আয়েশা আমার আদরের কইলজা, কইলজারে কে নিয়ে গেল?’