জিম্মি দশা থেকে মুক্তি

‘এখন একটাই প্রতীক্ষা, কবে ছেলে দেশে ফিরে আসবে?’

জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আনোয়ারুল হক। তাঁর মুক্তির খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ মা দৌলত আরা বেগম আনন্দে আত্মহারা
ছবি: প্রথম আলো

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আনোয়ারুল হক। তাঁর মুক্তির খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ মা দৌলত আরা বেগম আনন্দে আত্মহারা। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে আনোয়ারুলের মুক্তির খবর পাওয়ার পর তিনি নিজেই আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে ছেলের মুক্তির খবর পৌঁছে দেন।  

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ২৩ জন নাবিকসহ অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ২৩ নাবিকের মধ্যে আছেন নোয়াখালীর আরও একজন। তিনি হলেন চাটখিল উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া গ্রামের মোহাম্মদ ছালেহ আহমদ (৪৩)। তাঁদের মুক্তির খবর পরিবারের কাছে পৌঁছানোর পর পরিবারের সদস্যরা স্বস্তি পেলেন। তাঁরা ধন্যবাদ জানান জাহাজের মালিকপক্ষ ও সরকারকে।

আজ রোববার সকালে কোম্পানীগঞ্জের রামপুর গ্রামে আনোয়ারুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের প্রতিটি সদস্যের চোখেমুখে আনন্দ। মা-বাবা ছেলের মুক্তির খবর জানাতে গিয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। আনোয়ারুলের মা দৌলত আরা বলেন, রাত ১২টার দিকে তাঁর ছেলে ফোন করে তাঁকে বলে, ‘মা, আমি মুক্তি পেয়েছি, ওরা আমাদের সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে।’ এ কথা শোনার পর তাঁর পুরো শরীরে শক্তি ফিরে আসে। অথচ ছেলে দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবর শোনার পর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারতেন না। যখনই খেতে বসতেন ছেলের কথা মনে পড়ত। ছেলের মুখখানা চোখের সামনে ভেসে উঠত।

আনোয়ারুলের বাবা আজিজুল হক বলেন, ‘ছেলে দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার আমাদের পরিবারে সবাই নিজেদের স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ ৩২ দিন পর ছেলের মুক্তির খবরে আমরা পুনরায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। এখন একটাই প্রতীক্ষা, কবে ছেলে দেশে ফিরে আসবে?’

অন্যদিকে গতকাল শনিবার রাতে ছালেহ আহমদের ফোন পাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী তানিয়া আক্তার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। সেই সঙ্গে বাবার মুক্তি পাওয়ার তিন মেয়েও খুশিতে আত্মহারা। স্বামী দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কি না, সে আশঙ্কায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তানিয়া। কিন্তু স্বামীর মুক্তির খবরে মুহূর্তের মধ্যে যেন বুকের ওপর থেকে একটা পাথর সরে গেছে।

তানিয়া আক্তার বলেন, তিনি ও তাঁর তিন মেয়ে এত দিন ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেননি। ঈদের আনন্দ তাঁদের ঘরে ছিল না। এখন মেয়েরা অধীর আগ্রহে তাদের বাবার জন্য অপেক্ষা করছে।