ফরিদপুরে জলাবদ্ধতা

দুই মাস ধরে ডুবে আছে স্কুল, মসজিদ, বাড়িঘর

কোনো বাড়ির ভেতরে পানি রয়েছে। কোনো কোনো বাড়ির উঠান এবং কোনো বাড়ির রান্নাঘর ডুবে আছে। 

দুই মাস ধরে ফরিদপুর পৌরসভার ব্রাহ্মণকান্দা এলাকায় পানিবন্দী দেড় শতাধিক বাসিন্দা। পানি অপসারণে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। গত রোববার
ছবি: প্রথম আলো

দুই মাস ধরে পানিবন্দী জীবন কাটাচ্ছে ফরিদপুরের পৌরসভার ব্রাহ্মণকান্দা এলাকার দেড় শতাধিক বাসিন্দা। পাশাপাশি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ প্রাঙ্গণ পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এলাকাবাসী ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ অবস্থায় শেষ তিন দিনের ভারী বর্ষণের ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। পৌরসভা পাইপ দিয়ে পানি অপসারণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

জলাবদ্ধ এলাকাটির এক প্রান্তে পৌর এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রাজবাড়ি রাস্তার মোড়। সেখানকার নজরুল মুন্সীর মনোহারী দোকান থেকে দক্ষিণ দিকে বেলায়েত হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত চলে গেছে একটি সড়ক। নাম মণ্ডলবাড়ি সড়ক। দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ওই সড়কের ৫০০ মিটার অংশ পানেতে ডুবে আছে। এলাকাটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ মণ্ডল (৫৪) বলেন, ‘ঘর থেকে বাইর হলেই পানি মাড়াতে হয়। জুতা-স্যান্ডেল হাতে নিয়া পানি মাড়িয়ে সড়কের শুকনা অংশে উঠতে হয়। দুই মাস ধরে বড় বিপদের মধ্যে আছি, দেখার কেউ নাই।’ স্থানীয় গৃহবধূ ফাতেমা বেগম (৬৩) বলেন, ‘রান্নাঘর তলায় রইছে। রান্না করতে পারছি না। বসতঘরে আলগা চুলায় রাইন্ধা কোনোরকমে বাঁইচা আছি, তা ছাড়া রয়েছে সাপের উপদ্রব। কখন কার বাড়িতে সাপ ঢুকে যায়, সে আতঙ্কে থাকতে হয়।’

পানি সরে যাওয়ার জন্য সড়কসংলগ্ন এলাকায় কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। প্রতিবছর বৃষ্টির সময় এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

৮ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবদুল হাদী গণি মসজিদ এলাকার সড়ক এবং সড়কসংলগ্ন আশপাশের বাড়িগুলোর প্রাঙ্গণ পানিতে ডুবে আছে। স্কুল ও মসজিদ প্রাঙ্গণ পানিতে টইটম্বুর অবস্থা। পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন ওই এলাকার অন্তত ৩০টি পরিবার। কোনো বাড়ির ভেতরে পানি রয়েছে। কোনো কোনো বাড়ির উঠান এবং কোনো কোনো বাড়ির রান্নাঘর পানিতে ডুবে আছে। এই এলাকার বাড়িগুলো মূলত সেমিপাকা ধরনের। কয়েকটি আছে কাঁচা।

জোহরা বেগম (৪৩) নামের এক গৃহবধূ বলেন, ‘পোলাপানদের স্কুলে পাঠাইয়া শান্তিতে থাকতে পারি না। আগে পোলাপানদের স্কুলে নিয়া স্কুলের মাঠে বসে থাকতাম। স্কুলের মাঠ তলায় গেছে বইলা সে সুযোগ নাই।’

ব্রাহ্মণকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এলিজা ইয়াসমিন বলেন, ‘পানি থাকায় আমরা দুই মাস ধরে মাঠে অ্যাসেম্বলি করতে পারছি না। বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ২০৭ জন। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭৫ শিক্ষার্থী স্কুলে হাজির হতো। পানির কারণে শিক্ষার্থীদের হাজিরা ৭০-৮০ জনে নেমে এসেছে।’

আবদুল হাদী গণি মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আক্কাস মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের জলাবদ্ধতা, আমাদের বেদনার কথা আমরা পৌরসভাকে জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন এ সমস্যার সমাধান করবেন।

কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছি না।’ তিনি বলেন, বাইপাস সড়কটি হওয়ার পর থেকে আমাদের এ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ শুরু। যেবার বৃষ্টি বেশি হয়, সেবার দুর্ভোগের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আরাফাত হোসেন জানান, ১০ বছর আগে বাইপাস সড়কটি হওয়ায় ওই এলাকা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের তিনটি পথ বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটি পথ ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক। ফলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

কাউন্সিলর আরও বলেন, তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোসের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই এলাকার গৌর দত্ত ও হাফিজার মণ্ডলের ব্যক্তিগত জমি কেটে পাইপ দিয়ে পানি অপসারণের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।