মাধব মহলদার, পেশায় একজন মৎস্যজীবী। বয়স ৬০ বছর ছুঁই ছুঁই। ছোট থেকেই বাড়ির পাশের কাজিবাছা নদীতে মাছ ধরছেন। একসময় তাঁর বাবা-দাদারা ওই পেশায় ছিলেন। এখন তিনি যুক্ত আছেন এই পেশায়। তাঁর সঙ্গে যুক্ত আছেন তাঁর একমাত্র ছেলেও।
মাধব দহলদারের বাড়ি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা গ্রামে। বাবার যে সম্পত্তি ছিল, তা কেড়ে নিয়েছে পাশের কাজিবাছা নদী। এখন মাছ ধরেই জীবিকা চলে তাঁর। তবে রোববার নদীতে নামেননি, বাড়িতেই ছিলেন। দুপুরের দিকে সেখানেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে। যাঁরা সারা বছর নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, মাধব তাঁদের একজন।
মাধব মহলদার বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ নেই। আগে যেমন ইলিশ পাওয়া যেত, এখন তা–ও পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে জাল কেনা হয়েছে, ট্রলার ঠিক করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার মতো ঋণ আছে। ওই টাকা কীভাবে শোধ করবেন, সে চিন্তাতে ঘুম হয় না।
মাধব বললেন, এবার নিজের দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন, তা থেকে যে ধান পেয়েছেন, তা দিয়ে এত দিন চলেছে। সেই ধানও ফুরিয়ে আসছে। নদীতে মাছ পাওয়া না গেলে কীভাবে আগামী দিনগুলো চলবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘একদিন মাছ মারলি, ভাগ্যে যদি থাকে তালি ৫০০ টাকার মতো পাওয়া। ওই টাকা দিয়ে এখন কিছুই হয় না। বাজারে জিনিসপত্তের যা দাম বাড়িছে, তাতে আর বাজারে যাওয়ার মতো নেই। মাছ কিনতি হয় না কিন্তু মাঝেমধ্যে ডিম, মাংস তো কিনতি হয়। এখন সেটি কিনতিও কষ্ট হয়ি যাচ্ছে। ট্রলারের তেল কিনার টাকা পাচ্ছিনে, তাই নদীতি নামতি পারতিছি নে। টাকার অভাবে বাজার করতিও পারতিছিনে।’
মাধব মহলদারের সংসারে চার সদস্য। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও ছেলে ও বাবা আছেন। বাবা এখন কাজ করতে পারেন না। ছেলে ও তিনি নদীতে মাছ ধরেন। আগে গড়ে ১০ হাজার টাকার মতো থাকলে সংসার চলে যেত। এখন তা আর হচ্ছে না। শুধু সংসার খরচ জোগাড় করতেই সব টাকা চলে যাচ্ছে, অন্যকিছুর কথা ভাবতেও পারছেন না তিনি।