দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পানির উচ্চতা কমায় যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত

পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথের ফেরিঘাটগুলোর পন্টুন খাড়া হয়ে গেছে। এতে করে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এ সমস্যা চলছে।

ঘাটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চলতি মার্চের প্রথম থেকে পদ্মা নদীর পানি দ্রুত কমতে থাকায় দৌলতদিয়ায় তিনটি ঘাটেরই পন্টুন নিচে নেমে গেছে। ঘাটের পাশে ও লম্বালম্বিভাবে নদীর পাড় পর্যন্ত পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ঘাটের সঙ্গে পন্টুনের উচ্চতার ভারসাম্য ঠিক রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে।

কোনো রকম সংস্কার করে যানবাহন ওঠানামার উপযোগী করে সচল রাখা হয়েছে ঘাট তিনটি। এ কারণে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা ব্যাহত হওয়ায় প্রতিবার পারাপারে অতিরিক্ত ১৫-২০ মিনিট সময় বেশি লাগছে। এ কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানি দ্রুত কমায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়ার সব কটি ঘাটের পন্টুন খাড়া হয়ে গেছে। এ কারণে দুই সপ্তাহ ধরে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডব্লিউটিএ) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। প্রতিটি ঘাটের সামনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মিড–ওয়াটার বা লো–ওয়াটার লেভেলের ঘাট তৈরি সম্ভব নয় বলে তাঁরা জানিয়েছেন।’

বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে নদীর পানির উচ্চতা বাড়বে। তখন এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।

দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটসহ চারটি ঘাট বন্ধ রয়েছে

এ সপ্তাহে পরপর দুই দিন দৌলতদিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ৭ নম্বর ঘাটে ফেরিতে ওঠার সড়কে মাটি ও ইটের টুকরা দিয়ে পানির উচ্চতার সঙ্গে ভারসাম্য ঠিক রাখা হয়েছে। এরপরও ঘাট অনেক খাড়া থাকায় গাড়িগুলোকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে ফেরিতে উঠতে হচ্ছে। ফেরি থেকে গাড়িগুলো সড়কে উঠতে অনেক সময় লাগছে। ৬ নম্বর ঘাটের সামনে পানি না থাকায় পন্টুন অনেক খাড়া হয়ে গেছে, যে কারণে ঘাটটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

পন্টুনে টিকিট সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিসির রেকারচালক মো. নূরন্নবী প্রথম আলোকে বলেন, নদীর পানি কমে ঘাটের পন্টুন খাড়া হয়ে যাওয়ায় যানবাহন ওঠানামায় দীর্ঘ সময় লাগছে। ফেরি থেকে গাড়ি রাস্তায় উঠতে ও নামতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

কয়েক দিন আগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পন্টুন থেকে একটি ট্রাকের সামনের চাকা নদীতে চলে যায়। অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬ মার্চ দিবাগত রাত ১০টার দিকে পেঁয়াজবোঝাই একটি ট্রাক দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা নদীতে পড়ে যায়। চালককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন সেখানে থাকা লোকজন। পরদিন দুপুরে আরিচা থেকে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ট্রাকটি উদ্ধার করে। দীর্ঘক্ষণ পানিতে থাকায় অধিকাংশ পেঁয়াজ ও গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বর্তমানে সাতটি রো রো (বড়), পাঁচটি ইউটিলিটি (ছোট) ও তিনটি কে–টাইপ (মাঝারি) ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়ায় সাতটি ও পাটুরিয়ায় পাঁচটি ঘাট রয়েছে। এর মধ্যে পাটুরিয়ায় চারটি ও দৌলতদিয়ায় তিনটি ঘাট সচল রাখা গেছে। দৌলতদিয়ায় ভাঙনের কবলে পড়ায় ১ ও ২ নম্বর ঘাট প্রায় তিন বছর ও ৫ নম্বর ঘাট গত বছর থেকে বন্ধ। ৬ নম্বর ঘাটের সামনে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় গত নভেম্বর থেকে সেটিও বন্ধ। বর্তমানে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে।