আবুল কালাম আজাদ ও এম এ জাহের
আবুল কালাম আজাদ ও এম এ জাহের

উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে সংসদ সদস্য

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁদের নানা পেশার মানুষ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। 

দুজনই উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান হন। দুজনই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। দুজনই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। আবার নির্বাচনে তাঁরা পরাজিত করেন সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যানকে। 

বিজয়ী দুজন হলেন কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে মো. আবুল কালাম আজাদ ও কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে এম এ জাহের। ৭ জানুয়ারি তাঁরা জাতীয় সংসদ সদস্য পদে বেসরকারিভাবে জয়ী হন। ১০ জানুয়ারি তাঁরা শপথ নেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁদের নানা পেশার মানুষ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। 

আবুল কালাম আজাদ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এম এ জাহের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক। আজাদ ও জাহেরের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। আজাদ খাদ্যপণ্য আমদানি, মুরগি ও মাছ ব্যবসায় জড়িত। জাহের পেশায় ঠিকাদার, তেল, সিএনজি গ্যাস ও ইট ব্যবসায়ী। দুজনই একবার উপজেলা ও একবার জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। তাঁরা কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন জয়নুল আবদীন। ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হন আবুল কালাম আজাদ। নৌকা প্রতীক নিয়ে আবুল কালাম আজাদ ৯৫ হাজার ৫৬৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এ এফ এম তারেক পান ৫৯ হাজার ১৪২ ভোট। গত বছরের ২০ নভেম্বর আবুল কালাম আজাদ উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ থেকে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এতে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে ১৫ হাজার ৫৫০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। রাজীও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। 

সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় মানুষ আমাকে রায় দিয়েছেন। এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করব। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি জিতব। তা-ই হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য

জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দেবীদ্বারে আওয়ামী লীগকে গুছিয়েছি। সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় মানুষ আমাকে রায় দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ও বরাদ্দ সীমিত। ওই কারণে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে এমপি নির্বাচন করি। এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করব। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি জিতব। তা-ই হয়েছে।’ 

এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন এম এ তাহের। ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। পরে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হয়। এতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থী এম এ জাহের নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৬৩৯ ভোট। ৩ হাজার ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে জাহের জয়ী হন। এরপর গত ২০ নভেম্বর জাহের উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চান। দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। পরে তিনি কেটলি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। এতে তিনি ৬৫ হাজার ৮১০ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন। সাজ্জাদ পেয়েছেন ৬১ হাজার ৫২২ ভোট। ৪ হাজার ২৮৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন জাহের। 

এ প্রসঙ্গে জাহের বলেন, ‘ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচংয়ের মানুষ ভালোবেসে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের খেদমত করার জন্য চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে এমপি নির্বাচন করেছি। নির্বাচনে ভোটাররা আমাকে দুই হাত ভরে ভোট দেন। এখন বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হবে। জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম আমি। আমার কোন বদনাম নেই এলাকায়।’