ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পুলিশ বেষ্টনীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশস্থলের দুই পাশে ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নেওয়ায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে রাখে শিক্ষার্থীদের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যার বিচার, মামলা ও হয়রানি বন্ধ এবং ৯ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ময়মনসিংহে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক প্যানেল। নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিপরীত দিকে এই কর্মসূচি আহ্বান করা হয়। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সেখানে আগে থেকে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়। জয়নুল আবেদিন উদ্যান সড়কের মুখে অবস্থান করে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। বেলা ১১টা ৫ মিনিটের দিকে তারা জামায়াত-শিবিরবিরোধী স্লোগান দিয়ে একটি মিছিল বের করে। সে সময় কিছু ছাত্রী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে এলে তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হাতে বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবির পক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করেন। বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় সেখানে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আশিকুর রহমান ও সহসমন্বয় আরিফুল ইসলাম।
বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে ছাত্রলীগের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী জিরো পয়েন্টের দিকে আসতে শুরু করেন। জয়নুল আবেদিন উদ্যান সড়কে ছিল ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ। এতে মাঝখানে পড়ে যান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। ওই অবস্থায় পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের চারদিকে বেষ্টনী তৈরি করে তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
দুপুর ১২টার দিকে কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরের টাউন হল মোড় এলাকায় যান। সেখানে ১২টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধান সমন্বয়ক আশিকুর রহমান কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে চলে যান। কিন্তু বেলা দেড়টা পর্যন্তও কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করছিলেন।
আশিকুর রহমান বলেন, ‘৯ দফা দাবিতে এটি আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত কিছু বুঝি না। আমরা কোনো রাজনীতি করতে আসিনি। আমরা ন্যায্য দাবি নিয়ে এসেছি। আমাদের যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা তো দূরের কথা, শনাক্তও করা হয়নি। ময়মনসিংহে সাগর শহীদ হয়েছেন, তাঁর হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অচিরেই সাগর হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি নির্বিঘ্নে করতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে চলে যান। তিনি আরও বলেন, রেদোয়ান হাসান ওরফে সাগরের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে আসেননি কেউ। সে কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে ২৬ জুলাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।